‘দি হিডেন ভিলেজ’। ‘অদৃশ্য গ্রাম’। এমন নামেই খ্যাত হানিস্কট বা হেনাস্কু গ্রামটি। আঞ্চলিক বাসিন্দারা বলেন জবায়ুল বা জবালুং গ্রাম। অতীতে জবায়ুল নামে সমধিক পরিচিত ছিল এই গ্রামটি। ‘জবায়ুল’ কথাটির অর্থ ‘চোখের আড়ালে থাকা গ্রাম’ বা ‘অদৃশ্য গ্রাম’। কার্গিল-লে হাইওয়ের মাঝামাঝি একটা জায়গা থেকে মোড় ফিরে আরও কিছুটা পথ পেরিয়ে ঢুকতে হয় হানেস্কু গ্রামে। কার্গিল থেকে ৭০ কিলোমিটার।
বর্তমানে লাদাখের কার্গিল জেলার অন্তুর্গত হেনাস্কু। শ’দুয়েক মানুষের বাস। পাহাড় আর খাদ আড়াল করে রেখেছে গ্রামটিকে। অতীতে হেনাস্কু গ্রেট সিল্করুটের বিশিষ্ট অংশ ছিল বলে জানা যায়। খাদের উপরে একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ হেনাস্কুর অতীত গরিমার পরিচয় দেয়। আগে ট্রেক করে যেতে হত হেনাস্কু গ্রামে। এখন গাড়ি যাচ্ছে।
১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় হেনাস্কু নতুন করে খবরে আসে। হেনাস্কু-সংলগ্ন পাহাড়গুলির ওপর দিয়ে গেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রণরেখা। ‘৭১-এর যুদ্ধে পাক সেনারা হেনাস্কুর খাদের ধার পর্যন্ত এসে পড়েছিল। খাদের ওপারে পাহাড়। সেই পাহাড়ের উল্টোদিকের পাদদেশে হেনাস্কু গ্রামের অবস্থান। পাক সেনারা খাদের কাছে পৌঁছেও খাদের ওপারের এই গ্রামটির অস্তিত্ব টের পায়নি। বোঝা যায়, অতীত হেনাস্কুর বাসিন্দারা কী দূরদর্শিতার সঙ্গে লোকালয় গড়ার জন্য স্থান নির্বাচন করেছিল। কৃষিনির্ভর ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এখানকার। গ্রামবাসীরা বৌদ্ধধর্মালম্বী। প্রায় স্বনির্ভর গ্রাম। তবে রাস্তা হওয়ার পরে কালে কালে কী দাঁড়াবে তা এখনই বলতে পারি না।
সুন্দর একটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে হেনাস্কু গ্রামে। কিছু কিছু পর্যটকের আনাগোনাও শুরু হয়েছে গ্রামে। কিছু হোমেস্টেও গড়ে উঠেছে। ভ্রমণ রসিকদের আহ্বান জানাচ্ছে অদৃশ্য গ্রাম। হেনাস্কি গ্রামটি এখন ‘কার্গিল ওয়ার টুরিজম সার্কিট’-এর অন্তুর্ভুক্ত। এই সার্কিটে কার্গিল, দ্রাস, হান্ডারমান, মুস্কো ভ্যালির সঙ্গে হেনাস্কু গ্রাম বেড়ানো যায়। কার্গিল থেকে পুরো দিনের টুরে অন্যান্য জায়গার সঙ্গে হেনাস্কু বেড়িয়ে আসা যায়। মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত যাওয়া চলে। তারপরে জায়গাটা বরফের রাজ্য। প্রবল শীতে তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।
লেখকের সঙ্গে (শ্রীনগর, জম্মু-কাশ্মীর) যোগাযোগের নম্বরঃ ৬২৯০৩ ৬৩০৪১।