Follow us
Search
Close this search box.

বর্ষায় বড়ন্তি

বর্ষায় বড়ন্তি

আকাশে মেঘ। পাহাড় জঙ্গলে এই আলো তো ওই ছায়া। সেগুন, পলাশ, মহুয়া বনে নানা ধারার বৃষ্টি হয়। মুরাডি পাহাড়ে সবুজের বন্যা। নতুন জলে টইটম্বুর বড়ন্তির লেক। লাল মাটি এখন ঘন লাল। সবুজ আরও সবুজ। কচুপাতায় টলমলে জলবিন্দু। বাতাসে সোঁদা মাটি আর জঙ্গলের আঘ্রাণ। এখানে সেখানে বুনো ফুল। পাখি ডাকে। পড়ন্ত বিকেলে বড়ন্তির বিস্তৃত জলাধারে সূর্যাস্তের অবাক করা সব ছবি তৈরি হয়। বর্ষার প্রশান্ত, আত্মমগ্ন বড়ন্তি বড় মায়াময়।

ছবি সৌজন্যঃ পলাশবাড়ি ইকো রিসর্ট

পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর সাবডিভিশনের অন্তর্গত বড়ন্তি গ্রাম অল্পদিনেই পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তৈরি হয়েছে হোটেল, রিসর্ট। কলকাতা থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে সড়কপথে বড়ন্তি ২৩৭ কিলোমিটার।

বড়ন্তি বেড়ানো মানে অমলিন প্রকৃতির অভ্যন্তরে অবসর যাপন। বড়ন্তি গ্রামটির মধ্যেই বেড়ানো যায়। কাছ থেকে দেখবেন আদিবাসী মানুষের জীবনধারা। বড়ন্তির আশেপাশে রয়েছে আরও ছোট ছোট সুন্দর সব আদিবাসী গ্রাম। মাটি, বাঁশ দিয়ে গড়া কুটির। তার দেওয়ালে আঁকা কী সুন্দর সব আলপনা। দণ্ডহিত গ্রামটি ঘুরে দেখুন। আদিবাসী জীবনের নানা ছবি চোখে পড়বে। সঙ্গে থাকবে মন মাতানো প্রকৃতি।

বড়ন্তি লেক তথা সেচ প্রকল্পের দিগন্তবিস্তৃত জলাধার বড়ন্তির বিশেষ আকর্ষণ। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে, জোছনায় বড় মায়াময়। সে যেন এক আয়না।বড়ন্তির নানা ছায়া ধরা পড়ে। মেঘের ছায়ায়, বৃষ্টিতে বড়ন্তির জলরাশির রূপ পাল্টে পাল্টে যায়।

বড়ন্তির একদিকে পঞ্চকোট, অন্যদিকে বিহারীনাথ পাহাড়। লেকের পশ্চাৎপটে রয়েছে রামচন্দ্রপুর পাহাড়। বর্ষায় ঘন সবুজ পাহাড়গুলি থেকে চোখ ফেরানো যায় না। বর্ষায় রাঢ়ভূমিতে সবুজের বন্যা।

বেড়িয়ে নিতে পারেন

বড়ন্তিতে থেকেই বেড়িয়ে নিতে পারেন জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, পাঞ্চেত ড্যাম, কাশীপুর রাজবাড়ি, মাইথন ড্যাম। পথে পুজো দিতে পারেন কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে। সবক’টি জায়গাই বড়ন্তি থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে।

শীতের মরশুমে রক ক্লাইম্বার, ট্রেকারদের ভিড় জমে জয়চণ্ডী পাহাড়ে। বর্ষায় রক ক্লাইম্বিং বা ট্রেকিং সম্ভব নয়। কিন্তু পাহাড়, জঙ্গল জুড়ে বৃষ্টির আবহে দু-একটা দিন অবসর যাপনের জন্য জয়চণ্ডী পাহাড়ে থাকা যায় সবুজের রাজ্যপাটের মধ্যে।

বর্ষায় ভিড়ভাট্টাবিহীন মাইথনের প্রশান্ত সৌন্দর্য ভালো লাগবে। বর্ষায় পাঞ্চেতকেও পাওয়া যায় ভিন্ন রূপে।

গড়পঞ্চকোট বর্ষায় খুব সবুজ। ছুটির অবসর কাটাতে ভালো লাগবে। অতীতে সিংদেও রাজাদের আমলে যথেষ্ট সমৃদ্ধি ঘটেছিল গড়পঞ্চকোটের। বর্তমানে কিছু মন্দিরের ভগ্নাবশেষ সেই সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করছে। আর আছে বন্য প্রকৃতি।

হাতে সময় থাকলে যেতে পারেন বাঁকুড়ার বিহারীনাথ। বর্ষার সবুজ বিহারীনাথের রুপ, রসে মজতেই হবে। জঙ্গলাকীর্ণ ১৪৮০ ফুট উচ্চতার বিহারীনাথ পাহাড়কে কেন্দ্র করে রাঢ়বঙ্গের একটি বড় অঞ্চল জুড়ে অতীতে জৈন ধর্মের বিস্তার ঘটেছিল। পাহাড়ের পাদদেশে একটি শিবমন্দির আছে। ধূ ধূ সবুজ, দামোদর নদের প্রবাহ, পাহাড়, জঙ্গলের সমাহারে বিহারীনাথ শান্তিতে দুটো দিন ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা। বড়ন্তি-বিহারীনাথ দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।

মন চাইলে বিহারীনাথে একটা দিন কাটিয়ে চলে আসতে পারেন মন্দিরের ষর বিষ্ণুপুরে। বর্ষার আলো-ছায়ায় বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলিকে আলাদা রূপে দেখার সুযোগ মেলে। বিহারীনাথ-বিষ্ণুপুর দূরত্ব ৯২ কিলোমিটার।

যাওয়ার পথ

কলকাতা থেকে সড়কপথে বড়ন্তির দূরত্ব ২৩৭ কিলোমিটার। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, শালতোড়া, সাঁতুরি, মুরাডি হয়ে বড়ন্তি। নিকটতম রেলস্টেশন মুরাডি। নিকটবর্তী বড় স্টেশন আসানসোল ও আদ্রা। বড়ন্তি সড়কপথে আসানসোল থেকে ৪৫ এবং আদ্রা থেকে ২৮ কিলোমিটার। আসানসোল বা আদ্রা থেকে লোকাল ট্রেনে মুরাডি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটোরিক্সায় বা গাড়িতে অল্প সময়ে চলে আসা যায় বড়ন্তি। মুরাডি স্টেশন থেকে বড়ন্তি ১০ কিলোমিটার। সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ১১টার মধ্যে আদ্রা পৌঁছে যায়। হাওড়া থেকে উপাসনা এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, হিমগিরি এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেনগুলি আসানসোল যাচ্ছে।

থাকার ব্যবস্থা
বড়ন্তিতেঃ লেক ভিউ রিসর্ট, ফোনঃ ৯৪৩২২-৯৬১৭৮, ৯৫৬৪৯-২৫৮৭২। স্প্রাঙ্গেল উইংস রিসর্ট, ফোনঃ ৭২৭৮৫-৬৫৬৫৯, ৭৯৮০৯-৩০০৭৯। পলাশবাড়ি ইকো রিসর্ট, ফোনঃ ৯০৫১৬-১৬০১২। মহুলবন হিল রিসর্ট, ফোনঃ ৯৮৭৪৩-১৩১০৫, ৯৯৩২৩-২৮৬৯৬। আকাশমণি রিসর্ট, ফোনঃ ৮০১৭২-১৫৯৫৮।
জয়চণ্ডীতেঃ জয়চণ্ডী হিল রিসর্ট, ফোনঃ ৭০৭৬৭-০৩১৮৭।

বিহারীনাথেঃ ট্রেকার্স হাট, ফোনঃ ৯৩৩৩৭-৮১২৪২। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের টুরিস্ট লজ, ফোনঃ (০৩৩) ২৪৭৯-৯০৩২/৭৩৯২।
গড়পঞ্চকোটেঃগড়পঞ্চকোট নেচার রিসর্ট (পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম), ফোনঃ ৭৬০৪০-৪৪৪৭৯। পলাশবীথি ইকো রিসর্ট, ফোনঃ ৮০০১৭-০২০৮৭।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *