আছে নাকি নেই? শাংগ্রিলা’র আস্তিত্ব আছে নাকি নেই? প্রশ্ন, কৌতূহল দীর্ঘকালের। নিরসন হয়নি তার এখনো। কৌতূহল বেড়েছে। বিশ্বের বাঘা বাঘা অভিযাত্রীদের একটা চোখ রয়েছে সাংগ্রিলা-সম্পর্কিত নতুন তথ্যের দিকে।
এখনো পর্যন্ত শাংগ্রিলা একটি ইউটোপিয়া। কল্পরাজ্য। নাকি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি সেই রহস্যময় উপত্যকাটিকে? অবস্থানগত দিক থেকে সাংগ্রিলার ধারণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতও। অনেকে মনে করেন, যোগগুরু শ্যামাচরন লাহিড়ীর গুরু মহাবতার বাবা এখানে গিয়েছিলেন।
চিনের তিব্বত ও অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তের কোথাও অস্তিত্ব ও অস্তিত্বহীনতার মধ্যে দুলতে থাকা এক উপত্যকার নাম শাংগ্রিলা। তিব্বতি ‘রি’ শব্দটির অর্থ পর্বত, ‘লা’ মানে পাস। শাং নামের একটি পার্বত্য পাস শাংগ্রি-লা। একটি উপত্যকাও বটে। এখানে গেলে নাকি এ পৃথিবীতে আর ফিরে আসা যায় না। চলে যেতে হয় ভিনজগতে। শাংগ্রিলা নিয়ে চালু আছে এমন নানা ধারণা ও উপকথা।
১৯৩৩-এ প্রকাশিত জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ উপন্যাসের পটভূমি এই শাংগ্রিলা। এই উপন্যাস অবলম্বনে ‘লস্ট হরাইজন’ নামেই ফ্রাঙ্ক কাপরা পরিচালিত সিনেমাটি শাংগ্রি-লা নিয়ে বিশ্ববাসীর প্রবল কৌতূহল তৈরি করেছিল। সিনেমাটি রিলিজ করেছিল ১৯৩৭ সালে
২০০০ সালে ইতিহাসকার ও লেখক চার্লস অ্যালেনের ‘দি সার্চ ফর শাংগ্রিলা, আ জার্নি ইন টু টিবেটান হিস্ট্রি’ বইটি নতুন করে শাংগ্রি-লা উপত্যকার প্রসঙ্গটিকে আলোকবৃত্তে এনে ফেলল। বইটির প্রকাশক অ্যাবাকাস। অ্যামাজন থেকে কিনতে পাওয়া যায়। অরুণ কুমার শর্মার ‘দ্যাট মিস্টিরিয়াস ভ্যালি অফ টিবেট’-এ রহস্যময় শাংগ্রিলা উপত্যকার প্রসঙ্গ রয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং মনাস্ট্রিতে শাংগ্রি-লা উপত্যকা-বিষয়ক মূল্যবান তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হয়। শাংগ্রিলা কি প্রাচীন তিব্বতের উন্নত কোনও সভ্যতা ছিল? নানা কথা, উপকথা, ধারণা, কল্পনা ইত্যাদির মধ্যে থেকে যে নির্যাসটা বেরিয়ে আসে তা হল একটা জায়গার অস্তিত্ব অন্তত ছিল যাকে নিয়ে কথা ও কাহিনির ডালপালার বিস্তার ঘটেছে কালে কালে।
দ্যাট মিস্টিরিয়াস ভ্যালি অফ টিবেটের লেখক অরুণ কুমার অবশ্য মনে করেন, জায়গাটার পরিবেশে একটা তৃতীয় মাত্রা কাজ করে। আমাদের চেনাজানা সময় কাজ করে না ওখানে। মুক্তি অনুভূত হয়। মন কাজ করে অন্যভাবে।
২০১৩-য় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে এমিলি টি ইয়ে এবং ক্রিস কগিংস সম্পাদিত ‘ম্যাপিং শাংগ্রিলা’ নামের বইটি শাংগ্রিলার খোঁজ-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ বইয়ে শাংগ্রিলার অবস্থান বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়। জায়গাটি যে ভারত-তিব্বত সীমান্তে তা মেনে নেওয়া হয়েছে এ বইয়ে।
২০০১ সালে চিন সরকার ঘোষণা করে, য়ুনানের ঝংডিয়ান কাউন্টিতে কল্পনার শাংগ্রিলার বাস্তব অবস্থান। বইয়ের ভূমিকায় ক্রিস কগিংস খাওয়া কাপরো নামে একটি জায়গায় যাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন। পার্বত্য এলাকা। এখানকার পর্বত তিব্বতিদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। ১৪ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতা খাওয়া কাপরো পাহাড়ের। য়ুনানের উত্তর-পশ্চিমে ভারত-তিব্বত সীমান্তে খাওয়া কাপরোর অবস্থান। উৎসাহীরা যাচ্ছেন সেখানে। এখানকার মাশরুম গুনমানে বিশ্বখ্যাত। তাহলে? শাংগ্রিলা আবিষ্কৃত হল কি? চিনের প্রশাসন জানাচ্ছে, শাংগ্রিলায় যাওয়া যাচ্ছে এখন।
য়ুনানে জমে উঠেছে পর্যটন। চিনের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা শাংগ্রিলা বেড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
তথ্যের জন্য দেখতে পারেন নীচের অয়েবসাইটটি-
https://www.chinahighlights.com/shangri-la/plan-a-trip.htm