‘ডুয়ার্সের স্বর্গ’ বলা হয় লেপচাখাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ ফুট উচ্চতায় লেপচাখা একটি ছোট্ট গ্রাম। আলিপুরদুয়ার থেকে বক্সা টাইগার রিজার্ভের অন্তর্গত লেপচাখার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। সান্তালাবাড়ি হয়ে গাড়ি চলে যাবে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। শেষ সাড়ে ৩ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। বাঁক নেওয়া সে রাস্তা ধরে যাত্রায় দার্জিলিং, সিকিমে পথ ধরে চলার স্বাদ পাওয়া যায়।
পাহাড়ি বনের মধ্য দিয়ে চওড়া পায়ে হাঁটার রাস্তা ধরে কিছুদূর যাওয়ার পরেই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ। বক্সা দুর্গ দেখার পর ফের চড়াই পথে হাঁটা। ১ থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন লেপচাখা।
ওই যে হাঁটা, তার একটা বিশেষ স্বাদ আছে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে হাটাঁ, শব্দ বলতে শুধু ঝিঁঝিঁ কলতান।, পথের ধারে ধারে রকমারি বুনো ফুল, প্রজাপতি, সবমিলিয়ে সে যাত্রা স্বর্গীয় বলে মনে হতেই পারে।
বাতাসে উড়তে থাকা রঙিন প্রার্থনা পতাকা লেপচাখাঁ গ্রামে আপনাকে স্বাগত জানাবে। মেঘ, রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা চলে এখানে। ঠাণ্ডা বাতাস ছুঁয়ে যাবে আপনার শরীর-মন। কখনো মেঘের চাদর জড়িয়ে ধরবে লেপচাখা গ্রামটিকে, আপনাকেও। হালকা বৃষ্টির ছোঁয়া আপনাকে তরতাজা করে তুলবে। কাছেই ভুটানের পাহাড়, সে-ও এক হাতছানি। অনবদ্য নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী আপনাকে মুগধ করবে।
চাঁদনি রাতের লেপচাখাকে কেমন রহস্যময় মনে হয়। আকাশ ভরা তারা। জোছনায় ছাওয়া লেপচাখা মনে থাকবে অনেক দিন। লেপচাখা থেকে সূর্যোদেয় দেখাও একটি অভিজ্ঞতা। অনবদ্য সূর্যোদেয় দেখবেন রোভার্স ভিউ পয়েন্ট থেকে। সূর্যের প্রথম আলোয় উদ্ভাসিত হবে লেপচাখা গ্রাম ও তার চারিদিকে।
ভুটান-ঘেঁষা লেপচাখায় বহুকাল ধরেই দ্রুকপা (আঞ্চলিক ভাষায় ডুকপা) জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। দ্রুকপাদের আদি নিবাস তিব্বত। লেপচাখায় দ্রুকপাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলিকে দেখা যাবে। গ্রামে গুম্পা আছে।
চাষ-আবাদ ও পশুপালন লেপচাখার দ্রুকপাদের জীবীকা। এলাচ, গোলমরিচ, আদা, কমলালেবু, স্কোয়াস, কলা প্রচুর পরিমাণে ফলে এখানে। কিছু লোক পর্যটন পরিষেবার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
ফটোঃ লেখক।
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ 88034 70737,70471 00388.