এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি পুজো। ওই পুজোর সময় থেকেই সান্দাকফু-ফালুটের পথে ট্রেকিং ও মোটর যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। সিঙ্গালিলা গিরিশিরা ও ভারত-নেপাল সীমান্ত রেখা ধরে পথটির আকর্ষণ দুর্নিবার। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ট্রেক করতে আসেন এ পথে। শারিরীক কারণে বা সময়াভাবে ট্রেক করতে না পারলেও সান্দাকফু থেকে আশ্চর্য সূর্যোদয় ও ‘স্লিপিং বুদ্ধ’র অবয়বটি চাক্ষুষ করার সুযোগ রয়েছে মোটরযানে সওয়ার হয়ে। বিশ্বের উচ্চতম পাঁচটি পর্বতশৃঙ্গের চারটিরই দেখা মেলে সান্দাকফু থেকে। এই চার শৃঙ্গ হলঃ মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে ও মাকালু।
সান্দাকফু-ফালুট যাত্রার বেসক্যাম্প দার্জিলিং জেলার মানেভঞ্জং। উচ্চতা ৭,০০০ ফুট। এন জে পি স্টেশন চত্বর থেকে মানেভঞ্জং ৮৫ কিলোমিটার। দার্জিলিং শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার। মানেভঞ্জং থেকে সান্দাকফু ৩২ কিলোমিটার। সান্দাকফু থেকে সবারকুম হয়ে ফালুট ২৬-২৭ কিলোমিটার। সান্দাকফু শীর্ষের উচ্চতা ১১,৯০৯। ফালুটের অবস্থান ১১,৮১১ ফুট উচ্চতায়।
যাঁরা ট্রেক করবেন, তাঁরা মানেভঞ্জং থেকে পোর্টার, গাইড পাবেন। সান্দাকফুগামী গাড়িও পাবেন মানেভঞ্জং থেকেই। কিছুদিন আগে পর্যন্তও সান্দাকফু-ফালুটের এবড়োখেবড়ো পাথুরে পথে, চড়াই পথ আঁকড়ে চলাচল করত পুরনো সব ল্যান্ড রোভার গাড়ি। মালপত্র পরিবহণের কাজেও একমাত্র ভরসা ছিল এই গাড়িটিই। এখন গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে বোলেরোর মতো গাড়ি চলছে সান্দাকফু-ফালুটের পথে।
বয়সের কারণে অনেক ল্যান্ড রোভার অবসর নিলেও ব্রিটিশ আমলের কিছু ল্যান্ড রোভার জিপ এখনো চলাচল করছে সান্দাকফু-ফালুটের পথে। ঐতিহ্যমণ্ডিত টয়ট্রেনের মতো প্রাচীন ল্যান্ডরোভারও দার্জিলিংয়ের একটি ‘আইকনিক’ যান। আরও কিছুদিন পরে এই পুরনো পাহাড়ি গাড়িগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। এখনো আছে। চলবে কিছুকাল। সান্দাকফুর পথে ল্যান্ড রোভারের চাহিদা প্রবল। আধুনিক গাড়ির মতো সাজসজ্জা নেই পুরনো ল্যান্ডরোভারের। তবে ঐতিহ্য ও নির্ভরযোগ্যতা গাড়িটির চাহিদা বজায় রেখেছে। সিঙ্গালিলা ল্যান্ড রোভার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা অনিল তামাং জানাচ্ছেন, যাঁরা গাড়িতে সান্দাকফু, ফালুট যেতে আগ্রহী, তাঁদের অনেকেই ল্যান্ড রোভারেই যেতে চান গাড়িটির দীর্ঘ ঐতিহ্যের কারণে’।
প্রসঙ্গত, পঞ্চাশের দশকে ইংল্যান্ডের সলিহ্যালে রোভার কোম্পানির তৈরি পাহাড়ি পথে চলবার উপযোগী এই ল্যান্ড রোভার গাড়িগুলিকে একসময়ে দার্জিলিংয়ের চা বাগানের কাজে ব্যবহার করা হত, ব্যবহার করত ব্রিটিশ সেনারাও। অনিল তামাং বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে কিছু গাড়ি চলে আসে দার্জিলিংবাসী মানুষের হাতে। সেই গাড়ি সান্দাকফুর পথে পর্যটক, খাদ্য, ওষুধ, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণের কাজটি করে আসছে ৭৫ বছর ধরে’।
ল্যান্ড রোভারে সান্দাকফু-ফালুট যাত্রার খরচ
সিঙ্গালিলা ল্যান্ড রোভার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভাড়ার নতুন তালিকা (২০২৩) অনুসারে মানেভঞ্জং-সান্দাকফু যাতায়াতের ভাড়া ৫,৫০০ টাকা। নাইট হল্টের জন্য দিতে হবে অতিরিক্ত ১,৫০০ টাকা। মানেভঞ্জং থেকে সান্দাকফু ড্রপ ৫,০০০ টাকা। মানেভঞ্জং-ফালুট যাতায়াতের ভাড়া ৯,০০০ টাকা। মানেভঞ্জং থেকে ফালুট ড্রপ ৮,৫০০ টাকা। নাইট হল্ট বাবদ রাতপিছু খরচ ১,৫০০ টাকা।
সিঙ্গালিলা ল্যান্ড রোভার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৬৪৭৭ ৯০৫৪৫, ৭০৪৭৭ ০৩৩০৮।
থাকার ব্যবস্থা
জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পরিচালিত লজ রয়েছে টংলু, সান্দাকফু, মোল্লে, ফালুট, শ্রীখোলায়। জিটিএ ট্রেকার্স হাট রয়েছে রিম্বিকে। যোগাযোগঃ সল্টলেকে সিটি সেন্টার মলের উল্টোদিকে (ডিডি-২৮, সেক্টর-ওয়ান, সল্টলেক, কলকাতা-৬৪)। ফোনঃ ৯৯০৩১-৭৪০৪৭, ০৩৩-২৩৩৭-৭৫৩৪। টুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টার, ভানু সরণী (মল রোড), দার্জিলিং। ফোনঃ ০৩৫৪-২২৫৪৬৭৯/ ২২৫৫৩৫১।
সান্দাকফুর পথে অন্যান্য হোটেল, লজ
চিত্রেঃ হকস নেস্ট, ফোন ৭৩১৯৫-৯১৮৩৬। দি অ্যাডভেঞ্চারস ক্লাব, ফোন ৯৯৩৩০-৯১৬০৯।
টুমলিংঃ শিখর লজ, ফোন ৯৫৬৪৭-৯৭৫৫১। সিদ্ধার্থ লজ ফোন ৯৫৯৩৩-২০৪০৮।
কালিপোখরিঃ পাণ্ডিম লজ, ফোন ৯৩৩৩৯-৬৪৭৭৪, (৯৭৭) ৯৭৩৫৯-১৬৫৪১। চেওয়াং লজ, ফোন ৮৭৬৮৩-৬২৮৭৯।
সান্দাকফুঃ শেরপা শ্যালে লজ, ফোন ৯৩৩২৫-৯৯২৬১, ৯৯৩৩৪-৮৮১৫৯।
গোর্কেঃ শান্তি লজ, ফোন ৮৬৯৭৬-৪৫৪৬৪।
গুরদুমঃ লাকপা দর্জি শেরপাস হোম, ফোন ৯৫৯৩৯-৯৬৩০৮।
শ্রীখোলাঃ হোটেল শোভরাজ, ফোন ৯৯৩৩৪-৮৮২৪৩, ৯৯৩২২-১৬১৯৭। গোপারমা লজ, ৯৭৩৩২-৬১৭৯৯।
ধোত্রেঃ শেরপা লজ, ফোন ৯৭৩৩০-৪৮৫৭৯।
রিম্বিকঃ কাঞ্চনজঙ্ঘা হোটেল, ৯৮৩২৫-১৮৬১৬। হোটেল গ্রিন হিল, ফোন ৯৫৯৩৭-২০৮১৭।