আবার হরিদ্বার। সারা দেশের মানুষের সমাগম যেখানে। কতবার যে হরিদ্বার এসেছি। কিন্তু জায়গাটা পুরনো হবার নয়। হরিদ্বার থেকে আমাদের উত্তরাখণ্ডের ‘ফুলো কি ঘাটি’ বা ‘ভ্যালি অফ ক্লাওয়ার্স’ ও হেমকুন্ড যাত্রার সূচনা ঘটবে। তা বলে হরিদ্বারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা যায় নাকি। তাই রাতটা হরিদ্বারে কাটানোর পরিকল্পনা ছিল। আর হরিদ্বারে থাকলে সন্ধ্যায় তো হর-কি-পৌরির ঘাটে যেতেই হয়। স্রোতবতী গঙ্গার তীরে সন্ধ্যারতি, এই দেশ, তার কত মানুষ, দোকান-পসার, কত ভাষার কথাবার্তা, এ যেন এক মিলনমেলা। আর এই সব কিছুকে একসূত্রে গ্রথিত করেছে গঙ্গা। আমার কাছে এ এক, যাকে বলে নস্টালজিয়া। রাত্তিরেও কেমন এক উদ্ভাসিত আলো। এ আলো বাইরের, ভিতরেরও।
পরের দিন সকাল সকাল হরিদ্বার থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল। প্রথমে ঠিক ছিল, পথে যোশীমঠ বা গবিন্দঘাটে একটা রাত কাটাবো। কিন্তু আমাদের গাড়ির চালক মহাদেব ঠিক করে, রাতে আমরা থাকবো আউলিতে। মনে হল, তা মন্দ হবে না, একটু হলেও আউলির ফ্লেবারটা থাকবে। সন্ধ্যার আগে আগে আউলি পৌঁছে গেলাম। মেন রোড থেকে খানিকটা নীচে আমাদের আস্তানা। বড়সড় হোমস্টে এটা। চারিদিকে আপেলের গাছ। বলা ভালো, আপেল বাগিচার মধ্যে এই হোমস্টে। প্রচুর আপেল ফলে রয়েছে। চমৎকার পরিবেশ। আউলিতে যে আপেলের চাষ হয়, এখানে না এলে জানতে পারতাম না।
অভ্যাস মতো পরের দিন খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল। মেঘলা আকাশ। সেপ্টেম্বর মাস (২০২৫)। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছেই। ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম। প্রথম গন্তব্য পুলনা। আউলি থেকে ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা। ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। তারপর পুলনা থেকে ট্রেক করে ঘাঙ্গারিয়া। গোবিন্দঘাটে হেলিকপ্টার সার্ভিস অফিসের সামনে গাড়ি থামাতে বলে রেখেছিলাম মহাদেবকে। ইচ্ছা, সুযোগ পেলে হেলিকপ্টারে ঘাঙ্গারিয়া চলে যাব। জানা গেল, সার্ভিস চালু রয়েছে। পাশেই হেলিপ্যাড। সাধারণত অনলাইনে বুকিং হয়। আজ অফলাইনেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। দাঁডিয়ে পড়লাম লাইনে। টিকিট হাতে পাওয়ার আগে ওজনের পালা। নিজের ওজন ৮০ কেজি। সঙ্গে দু’ কেজি অজনের ব্যাগ ফ্রি। ব্যাগের ওজন আরও বেশি হলে কেজিপ্রতি অতিরিক্ত ৭৫ টাকা করে দিতে হবে। গোবিন্দঘাট থেকে ঘাঙ্গারিয়া একপিঠের ভাড়া জনপ্রতি ৩০১৬ টাকা। পবন হংসের সার্ভিস। প্রতি ট্রিপে পাঁচজন করে যাত্রী উঠতে পারে।
দুগগা, দুগগা বলে উঠে পড়লাম হেলিকপ্টারে। দুটো পাহাড়ের মাঝ বরাবর এগিয়ে চলল হেলিকপ্টার। নীচে বয়ে চলেছে একটা নদী। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘাঙ্গারিয়া হেলিপ্যাডে পৌঁছে গেলাম। জাস্ট পাঁচ মিনিট। ভাবা যায় না। হেঁটে আসতে আমার কতক্ষণ সময় লাগতো কে জানে। গোবিন্দঘাট থেকে ঘাঙ্গারিয়া হাঁটাপথে ১৫ কিলোমিটার তো বটেই। দলের বাকি সদস্যরা ট্রেক করে ঘাঙ্গারিয়া আসবে।
বলে রাখা ভালো, এবারের এই সফরে আমার প্রধান লক্ষ্য ট্রেক করা নয়। ফুলের উপত্যকা দু’ চোখ ভরে দেখা আর ব্রহ্মকমল ফুলটি চাক্ষুষ করা, এই আমার মনোবাসনা।
ঘাঙ্গারিয়ার হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে চলে এলাম পূর্ব নির্দিষ্ট হোটেলে। তারপর লাঞ্চ সেরে বিশ্রাম। ট্রেক করে একে একে গ্রুপের অন্যরা পৌঁছাতে লাগল। শেষ জন যখন পৌঁছালো তখন ঘাঙ্গারিয়ায় মেঘলা বিকেল।
কাল আমাদের ফুলের উপত্যকায় যাত্রা। সে-কথা জানাবো পরের পর্বে।
ফটো (উপর থেকে)
১) হরিদ্বারের হর কি পৌরি ঘাট।
২) দেবপ্রয়াগে অলকানন্দ ও ভাগীরথীর সঙ্গম।
৩) উত্তরাখণ্ডের শ্রীনগর ও রুদ্রপ্রয়াগের মাঝে অলকানন্দা নদীর উপর ধারী দেবীর মন্দির।
৪) গোবিন্দঘাটের হেলিপ্যাড।
৫) ঘাঙ্গারিয়া।
ফটোঃ লেখক