সাগরপারে মৎস্যজীবীদের ঘাঁটি গোপালপুরের ‘গোপালপুর-অন-সি’ হয়ে ওঠা ব্রিটিশ আমলে। সিগনর ম্যাগলিওনি নামের এক ইতালীয় ১৯১৪ সালে গোপালপুরে তৈরি করেছিলেন পাম বিচ রিসর্ট। এটিই ভারতের প্রথম বিচ রিসর্ট বলে একটা জোরালো মত রয়েছে। বর্তমানে মেফেয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন এই হোটেলটি। গোপালপুরে হাত বাড়ালেই যেন সমুদ্রকে ছোঁয়া যায়। তাই ‘গোপালপুর-অন-সি’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গোপালপুরকে বন্দর হিসেবেও ব্যবহার করেছিল ইংরেজরা। অতীতে, কলিঙ্গ রাজাদের আমলে গোপালপুর একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে দীর্ঘকাল। গোপালপুর শহরের মধ্যে দিয়ে বেড়ালে প্রায়-ধ্বংসপ্রাপ্ত অনেক প্রাসদোপম প্রাচীন বাড়ি চোখে পড়বে। অতীত গোপালপুরের সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করছে ভগ্ন প্রাসাদগুলি।
দক্ষিণ ওড়িশায় গঞ্জাম জেলায় বঙ্গোপসাগরের তীরে গোপালপুর অন-সি একটি শান্ত, সুন্দর সৈকত শহর। ভিড়ভাট্টা তুলনামূলক ভাবে কম। সমুদ্রতীরের কোনও হোটেলের ব্যালকনিতে ধূমায়িত চায়ের কাপ নিয়ে বসে নানা ছন্দের সমুদ্র দেখতে দেখতেই কেটে যায় কত সময়। সে সত্যিই ছুটির মেজাজ। আবার বর্ষার উত্তাল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অন্য স্বাদ। শীতে ঝলমলে সৈকত, সুনীল সমুদ্র, সমুদ্র পারের সবুজ, সে এক মন ভালো করে দেওয়া পরিবেশ। প্রবল গ্রীষ্ম ছাড়া সারাবছরই গোপালপুরে বেড়াতে আসা যায়। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্রে রংয়ের খেলা চলে। সৈকতের লাইটহাউস থেকে সমগ্র গোপালপুরকে দেখা যায় পাখির চোখে। ব্রহ্মপুর বা বেরহামপুর স্টেশন থেকে গোপালপুরের সৈকত ১৬ কিলোমিটার।
আশেপাশে
বেড়িয়ে আসা যায় চিলিকা হ্রদের প্রবেশদ্বার রম্ভা থেকে। গোপালপুর থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। গোপালপুর থেকে তারাতারিনী মন্দির ৩০ কিলোমিটার। ঋষিকুল্যা নদীর তীরে একটি ছোট পাহাড়ের উপরে চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে এই মন্দিরটি। এটি একটি শক্তিপীঠ।
প্রাচীন ইতিহাসে যাঁদের বিশেষ আগ্রহ, তাঁরা গোপালপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের যৌগদা যেতে পারেন। তারাতারিনী মন্দিরের কাছাকাছিই জায়গাটি। প্রাচীন শিলালিপি, নানান টেরাকোটা সামগ্রী, মুদ্রা ইত্যাদির সংগ্রহ দেখা যায় এখানে। অতীতে ঋষিকুল্যা উপত্যকায় যে একটি উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার সাক্ষ্য দেয় এইসব সামগ্রী।
ওড়িশার আরেক নিরালা ও শান্ত সৈকত আর্যপল্লী। গোপালপুরে থেকেই বেড়িয়ে নেওয়া যায়। দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সমুদ্রের তীর বরাবর ঘন সবুজ কাজু গাছের সারি, স্বর্ণাভ বালির ঝকঝকে সৈকত। ব্যস্ত ব্রহ্মপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র। সৈকত তীরে রয়েছে মৎসজীবীদের বসতি। শান্তির ঠিকানা আর্যপল্লী সৈকত। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে আর্যপল্লীর আকাশে, জলে কত যে রং। কাছাকাছি শহর ছত্রপুর।
গোপালপুর থেকে তপ্তপানি ৬৫ কিলোমিটার। উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিশেষ খ্যাতি তপ্তপানির। প্রস্রবণের সালফার-সমৃদ্ধ জল শরীরের পক্ষে নানাভাবে উপকারী। তপ্তপানির নৈসর্গিক সৌন্দর্যও কম যায় না। এখানে থাকার জন্য ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস রয়েছে।
যাওয়ার পথ
হাওড়া-এর্নাকুলাম স্পেশাল, হাওড়া-যশবন্তপুর সুপারফাস্ট, শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ স্পেশাল, ফলকনামা এক্সপ্রেস-সহ বিভিন্ন ট্রেন ব্রহ্মপুর যাচ্ছে।
থাকার ব্যবস্থা
পান্থনিবাস, গোপালপুর, ফোনঃ ৬৮০২৩-৪৩৯৩১। মেফেয়ার পাম বিচ রিসর্ট (ওড়িশার প্রথম হোটেল), ফোনঃ ৯২৩৭৫-০০১০১। হোটেল সি পার্ল, ফোনঃ ৬৮০২৩-৪৩৫৫৭। গোপালপুর পাম রিসর্ট, ফোনঃ ৯৩৩৭৪-৭৬৪৭৮। হোটেল ময়ূরী, ফোনঃ ৬৮০২২-৫০৮৮২।
ফটোঃ ওড়িশা টুরিজম।