২০২৪-এর ১৫ জানুয়ারি (২৯ পৌষ) মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। সাগর দ্বীপের মেলা শুরু হয়ে যাবে আরও ৭ দিন আগে থেকে। গঙ্গাসগর মেলা। মেলা ও স্নান উপলক্ষ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসমাগম ঘটে থাকে সাগর দ্বীপে। এর চেয়ে বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটে থাকে একমাত্র কুম্ভমেলায়। সেই হিমালয় থেকে নেমে আসা গঙ্গা এখানে মিলছে সমুদ্রে, সুনীল বঙ্গোপসাগরে। সাগর দ্বীপের প্রাকৃতিক মাহাত্ম্যও কম কিছু নয়। পুণ্যস্নানের পরে আরও দু’দিন থেকে যায় মেলার রেশ।
সমুদ্র ও গঙ্গার সঙ্গম-সংলগ্ন সাগর দ্বীপ পুন্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যিশু খ্রিস্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগে। রামায়ণ ও মহাভারতে গঙ্গাসাগরের উল্লেখ সেই প্রাচীণতার সাক্ষ্য দেয়। মন্দির তৈরি হয়েছে বহু কাল আগে। ১৪৩৭ সালে কপিল মুনির বর্তমান মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন রামানন্দী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী রামানন্দ। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে ইক্ষাকু বংশের রাজা ভাগীরথের উপাখ্যান যুক্ত হয়ে আছে গঙ্গাসাগরের সঙ্গে। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গাসাগরের সঙ্গমে মকর সংক্রান্তির স্নান মোক্ষ তথা জীবন-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি দেয়। সংক্রান্তি মানে সূর্যের এক রাশি থেকে আরেক রাশিতে প্রবেশ। মকর সংক্রান্তি হল সূর্যের মকর রাশিতে (শনির ঘরে) প্রবেশ। মকর সংক্রান্তির মহালগ্নে বিশালতার স্রোতে অবগাহন করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, হৃদয়ে থাকে শুভেচ্ছা।
মকর সংক্রান্তির সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের গঙ্গাসাগরে আগমন, থাকা, কপিল মুনির মন্দিরে পুজো আয়োজন, মেলা, পরিবহণ ইত্যাদি, জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা, পানীয় জলের জোগান, বিদ্যুতের নেটওয়ার্ক, স্থলে ও জলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, সব মিলিয়ে সে এক রাজসূয় যজ্ঞই বটে।
পথ
কলকাতার বাবুঘাট বা ধর্মতলার টার্মিনাস থেকে বাসে কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট। শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার ট্রেনেও কাকদ্বীপ যাওয়া যেতে পারে। সড়ক পথ ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, নিশ্চিন্তপুর ধরে হারউড পয়েন্ট কমবেশি ৮৫ কিলোমিটার। গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টার যাত্রা। তারপর মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে ওপারে কচুবেড়িয়া। সেখান থেকে গঙ্গাসাগর যাওয়ার বাস, অন্য গাড়ির সার্ভিস পাওয়া যায়। কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর ৪৩ কিলোমিটার। শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার ট্রেনেও কাকদ্বীপ যাওয়া যেতে পারে। ধর্মতলা থেকে বাসে অথবা শিয়ালদা থেকে ট্রেনে নামখানা পৌঁছে সেখান থেকে কাকদ্বীপ। নামখানা থেকে কাকদ্বীপ ১৬ কিলোমিটার। নামখানা ফেরিঘাট থেকে ওপারে মায়াগোয়ালিনীর ঘাট কিংবা বেনুবন ফেরিঘাট। ফেরিঘাটে নেমে গাড়িতে মেলা চত্বর, কপিল মুনির মন্দির।
ভিন রাজ্য থেকে আসেন লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী। গঙ্গা ও সাগরের মিলন ক্ষেত্রর মেলা দেখতে আসেন বিদেশী ভ্রমণার্থীও। কত আলোকচিত্রী অপেক্ষা করে থাকেন গঙ্গাসাগরের মেলার জন্য। নতুন বছরের মিলন মেলা। ওখানেই হারানো-প্রাপ্তির ঘোষণা হবে মাইকে। কেউ কেউ চিরতরে হারিয়েও যান।
ই-পুজো
কোভিডের সময় থেকে ই-পুজোর ব্যবস্থা হয়েছে। সারা পৃথিবীর সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার যোগসূত্রের ব্যবস্থা। অনলাইনে নাম-গোত্র, ঠিকানা ইত্যাদি জানিয়ে অনলাইনেই ২৫০ টাকা (রুপি) পাঠিয়ে দিলে বাড়িতে বসে পাবেন প্রসাদ ও আশীর্বাদী ফুলের একটি প্যাকেট। উদ্যোক্তা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন।
ই-পুজোর বুকিং করা যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ https://www.gangasagar.in/en/epuja
থাকার ব্যবস্থা
তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য সাগর দ্বীপের মেলা পয়েন্ট, চেমাগুড়ি, বেনুবন, কচুবেড়িয়ার আশ্রম মোড় এবং কাকদ্বীপের লট নং-৮, নামখানায় ছাউনি তৈরি হয়। প্রচুর ছাউনি। আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও প্রচুর।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের গঙ্গাসাগর টুরিজম প্রপার্টি রয়েছে। বুকিংয়ের লিঙ্ক https://wbtdcl.wbtourismgov.in/
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আগাম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগের নম্বরঃ ০৩২১০-২৪০২০৫/০৩৩-২৪৪০-৫১৭৮
গঙ্গাসাগর ইয়ুথ হস্টেল, বুকিং করা যায় এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ https://youthhostelbooking.wb.gov.in ওঁঙ্কারনাথ আশ্রমের
ওঁঙ্কারনাথ আশ্রমের অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা আছে, মেল info@yatradham.org