ছিবো
কালিম্পং শহরের কাছেই ধুপি ও পাইনের বনে ঘেরা একটি গ্রাম। নাম ছিবো। শহুরে ব্যস্ততার নামগন্ধ নেই সেখানে। দূষণহীন পরিবেশ। ৪১০০ ফুট উচ্চতায় ছিবোর অবস্থান। পাহাড়ের ধাপে চাষবাসের ব্যবস্থা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ক্যাকটাসের বাগান। কাঞ্চনজঙ্ঘা? হ্যাঁ, আবহাওয়া ভালো থাকলে ছিবো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় অপূর্ব সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখবেন। মেঘলা আবহাওতেও মন খারাপের কিছু নেই তো। মেঘের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়বেন, সে-ও সমতলবাসীর ক্ষেত্রে কী কম কথা।

ছবি সৌজন্যঃ নোমাডিক উইকেন্ডস কম।
এদিকের সব পাহাড়েই নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। ছিবোও তার ব্যতিক্রম নয়। জঙ্গলের পথ ধরে চলে যান ভিউপয়েন্টে। উপত্যকার মধ্যে দিয়ে তিস্তার দীর্ঘ গতিপথের সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত হতে হবে।
ছিবোর অবস্থানগত একটা সুবিধা আছে। কালিম্পং থেকে দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। ছিবোতে থেকে সহজেই কালিম্পং শহরটা বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
যাওয়ার পথ
এন জে পি স্টেশন থেকে সরাসরি ছিবো ৭৯ কিলোমিটার, শিলিগুড়ি থেকে ৬৩ কিলোমিটার। শেয়ার গাড়িতে বা পুরো গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন কালিম্পং। কালিম্পং বাজার এলাকা থেকে মিনিট কুড়ি সময়ে ছিবো পৌঁছাবেন।
কোথায় থাকবেন
দি ছিবো ইন, ফোনঃ ৯৬৭৪৩-৬৯০৯৯। হিমালয়ান ঈগল, ছিবো, ফোনঃ ৮০১৩৫-২৬৯০২। ইয়েশ হোমস ছিবো, ফোনঃ ৯১৬৩৫-৯৬০৭৫।
পাবং
কালিম্পং জেলার পর্যটন মানচিত্রে পাবং তুলনামূলকভাবে নতুন সংযোজন। ৪৭০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ঢালে পাবংয়ের অবস্থান। নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে ঘেরা পাবং বার্ড ওয়াচারদের স্বর্গরাজ্য। পাখির ডাক, ঝোরার জলস্রোত। শব্দ বলতে এই-ই। দু’চোখ ভরে হিমালয়ের কোলের একটি গ্রাম দেখুন। গ্রামে চাষ হয় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে। খাওয়ার টেবিলে সেইসব শাক-সবজির অকৃত্রিম স্বাদ পাবেন। দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা থাকবে। কাছেই ঝান্ডি দাড়া ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে স্বপারিষদ কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত সৌন্দর্যের নমুনা পেশ করবে। চাইলে নেওড়া ভ্যালিতে ট্রেক করতে পারেন। বেড়িয়ে আসতে পারেন পাবং থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের চারখোল থেকে। পাবং থেকে লোলেগাঁও ২০ কিলোমিটার।

ছবি সৌজন্যঃ ট্র্যাভেলফান্ডা।
যাওয়ার পথ
এন জে পি থেকে শিলিগুড়ি, বাগরাকোট, চুইখিম, চারখোল হয়ে পাবং ৭০ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে পাবং ১০০ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং শহরে পৌঁছে সেখান থেকে পুরো গাড়ি ভাড়া করে পাবং পৌঁছাতে পারেন। কালিম্পং থেকে পাবং ২৬ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
পাবং হোমস্টে, ফোনঃ ৭৯০৮১-১২৬১০। চিত্রকূট ফার্মহাউস, ফোনঃ ৯৪৩৫৫-১০৭৮৬। ক কোপা ভিলা হোমস্টে, ফোনঃ ৯৮৩২২-৫২৮৪৯।
চারখোল
পাবংয়ের কাছাকাছি কালিম্পংয়ের আরেক ভ্রমণ ঠিকানা চারখোল বা চারখোলে। পাবং থেকে দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় সাইপ্রাস, ওক, পাইন গাছে ছাওয়া চারখোল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ দৃশ্য আপনার ভ্রমণ সার্থক করবে, এ কথা বুক ঠুকে বলা চলে। ঝান্ডিদাড়া ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি চোখে ভেসে থাকবে অনেকদিন। ফুল, পাখি, প্রজাপতি, কমলালেবুর বাগান, কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাতাসে ওক, পাইনের আঘ্রাণ, এ সব নিয়ে শান্ত সুন্দর গ্রাম চারখোল।

ছবি সৌজন্যঃ নোমাডিক উইকেন্ডস।
চারখোলে থেকেই দিনে দিনে কালিম্পং, লোলেগাঁও থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। চারখোল থেকে লোলেগাঁও ১৫ কিলোমিটার। লোলেগাঁও থেকে লাভা ২৪ কিলোমিটার।
যাওয়ার পথ
কালিম্পং থেকে চারখোল ২৭ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের বাগরাকোট, চুইখিম হয়ে চারখোল চলে আসতে পারেন। পথের সৌন্দর্য ভালো লাগবে। তবে গোটা গাড়ি ভাড়া করেই এ পথে আসতে হবে। অন্যথায় এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চারখোল চলে আসুন।
থাকার ব্যবস্থা
চারখোল আদিত্য হোমস্টে, ফোনঃ ৭০০১৮-৫২৬১০। চারখোল রিসর্ট, ফোনঃ ৯৪৩৩৭-৬৮১৩৮, ৮৭৭৭৩-৮৩৬৬০। কোপা ভিলা হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯৬৭৪-২২১১৭।
কোলাখাম
নেওড়া ভ্যালির ধার ঘেঁষে কোলাখামের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মজতেই হয়। ৬২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কোলাখামের পাহাড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকতে হয়। নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি হওয়ায় কোলাখামে নানা পাখির দেখা পাবেন। মোলাকাত হয়ে যেতে পারে বন্য জন্তুর সঙ্গেও। কালিম্পংয়ের কোলাখাম প্রকৃতিপ্রেমিক এবং আ্যাডভেঞ্চারে আগ্রহীদের মন জয় করেছে।

ছবি সৌজন্যঃ নোমাডিক উইকেন্ডস।
পায়ে হেঁটে কোলাখাম গ্রামটা পরিক্রমা করুন। পাহাড়ি জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বহু প্রকার রূপ-রসের হদিশ পাবেন। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে কোলাখাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও দেখা পেতে পারেন পাণ্ডিম ও কাব্রু কাবরু ডোম শৃঙ্গেরও। কোলাখাম থেকে দেখে নিতে পারেন ছাঙ্গে জলপ্রপাত। গাড়িতে বা হেঁটে ৩ কিলোমিটার যাওয়ার পরে বাঁধানো সিঁড়ি-পথ ধরে নামতে হবে আরও দেড় কিলোমিটার, পৌঁছাবেন জলপ্রপাতের নীচের দিকে। আগ্রহীরা নেওড়া ভ্যালির নানা পথে ট্রেক করতে পারেন।
কোলাখাম থেকে রিশপ বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে রিশপে একটা রাত থাকতে পারলে ভালো হয়। কারণ, রিশপ থেকে সকালের সুদীর্ঘ কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জে সূর্যোদয়ের দৃশ্য কল্পনাকেও হার মানাবে। কোলাখাম থেকে রিশপ ১৪ কিলোমিটার। কোলাখাম থেকে বেড়িয়ে নেওয়া যায় লাভা ও লোলেগাঁও।
যাওয়ার পথ
কোলাখামের নিকটতম রেল স্টেশন নিউ মাল জংশন। কোলাখাম নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে ৭০ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে কোলাখাম ১০৮ কিলোমিটার। এন জে পি থেকে কোলাখাম ১১৩ কিলোমিটার। লাভা থেকে কোলাখাম ১০ কিলোমিটার। কালিম্পং থেকে কোলাখাম ৩৮ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
কোলাখাম কনিফার্স রিট্রিট, ফোনঃ ৯৯০৩৮-৭৩৬৮৬।রেড পান্ডা ইকো হাট, ফোনঃ ৮৪২০৩-৯৪৭৪৭।কোলাখাম গ্রিন ভ্যালি সামসুহাং হোমস্টে,ফোনঃ ৮০১৬৬-৩৩১৪৬।নেওড়া ভ্যালি ইকো হাটস,ফোনঃ ৯৮৩০৪-২৩২৪৬।কাসেরো কোলাখাম,ফোনঃ ৭৫৮৫৮-৪৮২৬৭।
সর্বোচ্চ (স্লাইডার) ফটো সৌজন্যঃ নর্থ ইস্ট ট্র্যাভেলস।