মায়রং গাঁও
কালিম্পং থেকে আলগাড়া ১৫ কিলোমিটার। আলগাড়া থেকে মায়রং গাঁও আরও ৮ কিলোমিটার। কালিম্পং শহরের কাছাকাছি মায়রং গাঁওয়ে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে খুবই সাম্প্রতিক সময়ে। এখানে সকালে ঘুম ভাঙে পাখির কূজনে। রাতে ঝিঁঝিঁ-র কলতান চতুর্দিকে। সবুজের সাম্রাজ্য মায়রং গাঁওয়ে। কালিম্পং শহর, আলগাড়া, রামধুরা, ইচ্ছেগাঁও, পেড়ং বেড়িয়ে আসা যায় এখান থেকে। দূরে যেতে ইচ্ছে না হলে মায়রং গাঁওয়ের পথে পথে হাঁটুন। সবুজের মধ্যে দিয়ে জনবিরল পথ ধরে সেই বেড়ানো নতুন রকমের অভিজ্ঞতা। মন-প্রাণ উজ্জীবিত হয়।
যাওয়ার পথ
এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি মায়রং গাঁওয়ে চলে আসা যায়। শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং এসে সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে মায়রং গাঁওয়ে পৌঁছাতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা
বাসনেট হোমস্টেঃ ফোন ৭৩৬৩৮ ০৬৭৩৭। তামাং সাংবু হোমস্টেঃ ফোন ৮৩৮৮৯ ৯০১১৫।
ফিক্কালে গাঁও
পাহাড়ের পর পাহাড়। সেইসব পাহাড়ে চরে বেড়ায় মেঘ। উপত্যকাগুলি বর্ষায়, শীতে থৈ থৈ করে মেঘে। চারিদিক সবুজে সবুজ। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে আকাশে ঝকঝক করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। জায়গাটা ফিক্কালে গাঁও। অবস্থান ৪,৫০০ ফুট উচ্চতায়। কালিম্পং শহর থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ১০ কিলোমিটার, পৌঁছে যাওয়া যায় আধ ঘন্টায়।
ফিক্কালে গাঁও কালিম্পংয়ের নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। এই গ্রামে এলে মনে হয়, সবুজের ঢেউ যেন আছড়ে পড়েছে জায়গাটায়। দিনমানে যত্রতত্র ঝিঁঝিঁ-র কলতান। কয়েকটি পরিবারের বসবাস গ্রামে। কয়েকটি মাত্র বাড়ি। পাহাড়ের ধাপে জৈব-পদ্ধতিতে সবজি, ভুট্টা ইত্যাদির চাষ হয়।
গ্রামের প্রান্তে, অনেকটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। সবুজের ওই ঢেউয়ের মধ্যে দিয়ে খানিক উপরের দিকে উঠে গেলে দেওরালি দাড়া। এটা একটা চমৎকার ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে তিস্তা-প্রবাহের দৃশ্য এক কথায় আসাধারণ। খানিকক্ষণ বসুন দেওরালি দাড়ায়। প্রাকৃতিক শোভায় মোহিত হবেন তো বটেই, সেইসঙ্গে ফুসফুস ভরে উঠবে অক্সিজেনে। ভিউপয়েন্টের কাছাকাছি রয়েছে একটি মনাস্ট্রি।
রাতে কালিম্পং, দার্জিলিং ও সিকিমের পাহাড়ে জ্বলে ওঠা আলোর মালা দুর্দান্ত এক দৃশ্য রচনা করে। চাইলে জমে উঠতে পারে বারবিকিউয়ের আসর।
ফিক্কালে গাঁও থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন কালিম্পং শহরটা। ফিক্কালে থেকে ডেলো পার্ক মাত্র ৪ কিলোমিটার। ফিক্কালেতে থেকেই বেড়িয়ে আসতে পারেন রিশপ, রামধুরা, ইচ্ছেগাঁও, পেডং। যেতে পারেন লাভা। দেখে আসতে পারেন ছাঙ্গে জলপ্রপাত।
যাওয়ার পথ
এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি চলে আসা যায় ফিক্কালে গাঁওয়ে। শিলিগুড়ি বা এন জে পি থেকে শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ফিক্কালে পৌঁছাতে পারেন। দ্বিতীয় ব্যবস্থায় খরচ কম হবে। ফিক্কালে গাঁও এন জে পি থেকে ৮৯ ও শিলিগুড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
মিস্টি মেডোজ হোমস্টে,ফোনঃ ৯০৭৩০ ৩৩৬৬৬
ক্যাপচাকেস ফার্মস্টে, ৯৩৩৯৯ ৫৬৮০৬
রামধুরা
কালিম্পং থেকে রামধুরা ১৫ কিলোমিটার। ৫০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রামধুরায় অনেক ফুল। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে রামধুরা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা একটি আশ্চুর্য ছবি। হনুমান তক কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ভালো একটা ভিউপয়েন্ট। রামধুরার মধ্যে রেশি রোড ধরে দিনে দিনে বেড়িয়ে আসা আসা যায় ইচ্ছেগাঁও, পেডং। ইচ্ছেগাঁও থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় সিলারিগাঁও। রামধুরার নিরিবিলি পরিবেশে থেকেই বেড়িয়ে নিতে পারেন কালিম্পং শহর, ডেলো পার্ক। অন্যদিকে আলগাড়া হয়ে বেড়িয়ে আসা যায় লাভা থেকে। ফুল, পাখি, গাঢ় সবুজ উপত্যকা, কাঞ্চনজঙ্ঘা। রামধুরা পাহাড়প্রেমীদের কাছে এক নতুন আবিষ্কার।
যাওয়ার পথ
এন জে পি থেকে রামধুরা ৮৬ কিলোমিটার। সরাসরি আসা যায় এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে। শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে রামধুরা চলে আসা যায়।
থাকার ব্যবস্থা
জাম্বালা গেস্টহাউস (আলগাড়া), ফোন ৯৬৭৯৬ ৯৫৭০৬। কাইনান্স হোমস্টেঃ ফোন ৯২৩৯১ ১৩৯৩৬। কনিফার্স হোমস্টেঃ ফোন ৯৯০৩৮ ৭৩৬৮৬। খালিং হোমস্টেঃ ফোন ৯৯৩৩৮ ০৩১৮৭। রামধুরা কুনসাং হোমস্টেঃ ফোন ৯৮০০৩ ১৭০২৩। কনিফার্স হোমস্টেঃ ৯৯০৩৮ ৭৩৬৮৬।
তাবাকোশী
মিরিক থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার। ঢুকে পড়া যায় চা-বাগানে ঘেরা এমন এক জায়গায় যেখানে ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই। সময় চলে ধীরে। নেপালী ‘তম্বা’ কথাটির অর্থ তামা এবং ‘কোশী’ হল নদী। তাবাকোশীর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে রংভং নদী। তামাটে রং তার। এখানে সেখানে পাইন, ফার, বার্চের বন। বিস্তৃত গোপালধারা টি এস্টেটের একটি অংশ তাবাকোশী গ্রামটি। তাবাকোশীতে যাওয়া মানে প্রকৃতির অন্দরমহলে প্রবেশ করা। এই পাহাড়ি গ্রামটিতে যাওয়ার পথে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলক দেখে মন উড়ু উড়ু হবেই।
উৎকৃষ্ট চা পাওয়া যায় এখানে। হোমস্টেতে চায়ের পেয়ালা পাশে নিয়ে বিশ্রাম নিন। ক্রমশ মুছে যাবে শরীর-মনের ক্লান্তি। গ্রামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়ান। পাহাড়ের গ্রাম-জীবনের নানা ছবি চোখে পড়বে। লক্ষ্য করলে দেখবেন পাখি। রংভং নদীতে মাছ ধরতে পারেন। একটু দূরে যেতে চাইলে চলে আসুন মিরিকে। মিরিকের লেকে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। লেকের প্রেক্ষাপটে মনাস্ট্রির দৃশ্য খুব সুন্দর। রংভংয়ের তীর ধরে পাইন বনের মধ্যে দিয়ে অচালাল বস্তি পর্যন্ত ট্রেক করতে পারেন। নদীতীরে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা হতে পারে।
যাওয়ার পথ
এন জে পি স্টেশন থেকে তাবাকোশী ৬৪ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে পুরো গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার গাড়িতে মিরিক চলে আসুন। মিরিক থেকে তাবাকোশী পৌঁছানোর জন্য আঞ্চলিক গাড়ি পাবেন। তাবাকোশী থেকে দার্জিলিং ২ ঘন্টার পথ।
থাকার ব্যবস্থা
টি ভিলেজ হোমস্টেঃ ফোন ৯০৮৩১ ১১৫৬৬। সুনাখাড়ি হোমস্টেঃ ফোন ৯৩৩৯৫ ১৬৭৯৮। রিভারসাইড ডোয়েলিং তাবাকোশীঃ ৬২৯৭১ ৪৬৪৩০।