লেপচা ভাষায় ‘খরসং’ শব্দটির অর্থ–সাদা অর্কিডের দেশ।। ইংরেজি ধাঁচে আমরা কার্শিয়াং বলি। অঞ্চলটা ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিল সিকিমের রাজা, ১৮৩৫ সালে। প্রকৃতপক্ষে সিকিম থেকে নেপাল হয়ে আবার সিকিম এবং তারপর ইংরেজদের অধিকারে আসে কার্শিয়াং। পরে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে ওই ব্রিটিশ আমলেই ৪,৮০০ ফুট উচ্চতার কার্শিয়াং একটি গুরুত্বপূর্ণ হিল স্টেশন হয়ে ওঠে। কার্শিয়াং পুরসভার বয়স ১২৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখানে কার্শিয়াংয়ের একটি ঝলক মাত্র। পর্যটকদের কাছে সামগ্রিক কার্শিয়াং এখনো আবিষ্কৃত হয়ে ওঠেনি। কার্শিয়াংয়ের প্রকৃতি, সংস্কৃতি কোনওটাই নয়।
সাদা অর্কিড ফোটে খরসংয়ে। একটু জঙ্গলের পথে এগোতে হবে। প্রশাসনিক দিক থেকে দার্জিলিং জেলার একটি সাব-ডিভিশন কার্শিয়াং। আর মর্যাদার দিক থেকে দার্জিলিং যদি পাহাড়ের রানি হয় তবে কার্শিয়াং রাজকন্যে।
পাহাড়ের ঢেউ, দূর আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সবুজ চায়ের বাগিচা, আশ্চর্য রকমের সুন্দর পাইন আর ধুপির বন, নদী, পাহাড়ের ধাপে ধাপে চাষবাস। ঔপনিবেশিক আমলের স্কুল, কলেজ, চার্চ, গোরস্থান এবং পাশাপাশি মনাস্ট্রি, মন্দির–এই সবকিছু নিয়েই কার্শিয়াং। মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে মিলমিশ কার্শিয়াংয়ের ধর্ম। হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চিয়ান, লেপচা জনগোষ্ঠীর মানুষজনের বসবাস কার্শিয়াঙে।
কার্শিয়াংয়ের বাজার, টয়ট্রেনের মিউজিয়াম-সহ কার্শিয়াং রেল স্টেশন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মিউজিয়াম, ডাউহিল ফরেস্ট মিউজিয়াম, চিমনি হেরিটেজ পার্ক, ঈগলস ক্রেগ, গিদ্দা পাহাড় ভিউ পয়েন্ট, হনুমান টক ইত্যাদি বেড়িয়ে দেখার। চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে খানিক বেড়িয়ে আসা তো সমতলের মানুষের রোজ রোজ হয় না।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, ভগিনী নিবেদিতা, সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের স্মৃতিবিজড়িত কার্শিয়াংয়ের ইতিহাস বর্ণাঢ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক স্মৃতির মংপু পাহাড় কার্শিয়াং থেকে ৪৪ কিলোমিটার। মংপুতে সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী ও তাঁর স্বামী ডাঃ মনমোহন সেনের বাড়িতে এসে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০-এর মধ্যে চারবার মংপুতে এসে থেকেছেন কবি। চলেছে সাহিত্যকর্ম। বাংলোটি এখন সংরক্ষণশালা, রবীন্দ্র ভবন।
পাইন, ধুপির জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ডাও হিলের রাস্তা ধরে হাঁটুন, রহস্যের গন্ধ পাবেন। নানা ভৌতিক কাহিনি শোনা যায় পথটি নিয়ে। আসলে প্রাকৃতিক পরিবেশের রহস্য। কার্শিয়াং স্টেশন থেকে টয়ট্রেনে সওয়ার হয়ে দার্জিলিং বেড়িয়ে আসুন, পাহাড়ের ঢাল ধরে চলে যান কোনও গ্রামে, দেখে আসুন চা বাগানের জীবন। একদিন চলে যেতে পারেন পাগলা ঝোরা এলাকায়। বর্ষায় পাগলা ঝোরা জলপ্রপাতটি দুর্দান্ত।
শিলিগুড়ি, এন জে পি, বাগডগরা থেকে কার্শিয়াং যথাক্রমে ৫১, ৫৮ ও ৬০ কিলোমিটার। কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং ৩৩ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
কার্শিয়াং টুরিস্ট লজ (পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম) ৩৫৪ ২৩৪ ৫৬০৮, ০৩৩-২৩৫৮ ৫১৮৯
কাইজার ভ্যালি হোটেলঃ ৮৬৯৫৪ ৩১৩১৩
ড্রিম হোমস্টেঃ ৯৮০০১ ০৩৫৪৫
সঞ্জীমা হোমস্টেঃ ৮৭৫৯৯ ০৯২২৫
ডিকিস হোমস্টেঃ ৭০৭৬৩ ৭৬৭০৫
হোটেল নির্বাণঃ ৮৫৩৮০ ৫৯১১৬
ফটোঃ দীপার্ণব সেন।