তিব্বতের (চিন) পশ্চিম সীমান্ত-ঘেঁষা দরমা ভ্যালির দনতু গ্রামে আমার ঘর। বাড়ির উঠোন থেকে দিনভর পঞ্চচুল্লির পাঁচটি তুষারাবৃত শৃঙ্গ দেখা যায়। সকালে-বিকেলে সেই পাহাড় চূড়াগুলিতে লাল টকটকে মশাল জ্বলে।
উত্তরাখণ্ডের পূর্ব প্রান্তে কুমায়ুন ডিভিশনের পিথোরাগড় জেলার অন্তুর্ভুক্ত দরমা উপত্যকার উচ্চতা প্রায় ১১,৪০০ ফুট। গোটা ১২ গ্রাম আছে উপত্যকায়। সব গ্রাম থেকেই ওই পঞ্চচুল্লি দেখা যায়। পুরাণ-কথা অনুসারে, পাণ্ডবদের স্বর্গযাত্রার পথে এই পাঁচ চুল্লিতে রান্না করেছিলেন দ্রোপদী। আমাদের কাছে পঞ্চচুল্লি পূজার পঞ্চপ্রদীপ।
ছোট ছোট খেত, পাহাড়, নদী, ঝরনা, তৃণভূমি, অজস্র ফুল ইত্যাদি নিয়ে দরমা খুব রঙিন। ট্রেক করে গ্রামগুলিতে বেড়ানো যায়। তাতে কার্যত আড়ালে থাকা এই অপরূপ উপত্যকা ও তার মানুষগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা হয়।
দরমা উপত্যকার উত্তর-পূর্ব প্রান্তের সীমানাকে ছুঁয়ে আছে চিনের তিব্বত। বৃহত্তর দরমা উপত্যকার দক্ষিণাংশ প্রলম্বিত নেপালের সীমানা পর্যন্ত। দরমার পূর্বে তিব্বতের সীমানা বরাবর ভারতের কুঠি ইয়াঙ্কতি উপত্যকা। দরমা উপত্যকার পশ্চিমে রয়েছে আরেকটি উপত্যকা। নাম লসার ইয়াঙ্কতি।
দরমা উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে দরমা নদী। দরমা ইয়াঙ্কতি বা দরমা গঙ্গা নামেও পরিচিত এই নদীটি। এই দরমা নদীর ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াকরণের কারণেই দরমা উপত্যকার উদ্ভব। ভারত-তিব্বত সীমান্তে উৎপত্তি এ নদীর, তারপর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে লসার ইয়াঙ্কতি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সম্মিলিত নদীর নাম ধৌলিগঙ্গা। এই ধৌলিগঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় কালী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
সাধারণত হিমালয়ের অভ্যন্তরের প্রকৃতি, সেখানকার মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরা দরমায় আসেন এবং থাকেনও। পঞ্চচুল্লির রূপ দেখে তাঁদের বিস্মিত হতে দেখেছি। আঞ্চলিক মানুষের অকৃত্রিম আতিথেয়তায় তাঁরা মুগধ হন। এখানকার গ্রামগুলির আচার-অনুষ্ঠান তথা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কাছ থেকে দরমায় দু’-চার দিন থাকা দরকার। আনন্দময় সময় কাটিয়ে ফিরবেন। ট্রেকিংয়ে আগ্রহীদের কাছে দরমা উপত্যকা স্বর্গরাজ্য।
আদি কৈলাশ এবং ওম পর্বত দর্শনের জন্য কিন্তু দরমা উপত্যকার মধ্যে দিয়েই যাত্রা করতে হয়। আদি কৈলাশ যাত্রা একইসঙ্গে তীর্থযাত্রা এবং অসাধারণ এক পর্বতাভিযান। আদি কৈলাশ পর্বতের পাদদেশে রয়েছে টলটলে জলের একটি লেক। পার্বতী কুণ্ড। পবিত্র এই হ্রদের তীরে শিব-পার্বতীর মন্দিরে আরতি দেখা যায়। এখান থেকে পাণ্ডব পর্বত, ব্রহ্মা পর্বতও দেখা যায়। ওম পর্বতের কাছে রয়েছে নারায়ণ আশ্রম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
প্রসঙ্গত, আদি কৈলাস বেস ক্যাম্প জলিংকং এবং ওম পর্বতের বেস ক্যাম্প নভিঢ্যাংয়ের উচ্চতা যথাক্রমে ১৫,০০০ ফুট ১৪,১০৭ ফুট। অল্টিটিউড সিকনেস প্রতিরোধক ব্যবস্থা অবলম্বনের দরকার হতে পারে।
যাঁরা আদি কৈলাশ/ওম পর্বত যাবেন না, তাঁরা দরমা উপত্যকার গ্রামে কয়েকটি দিন কাটিয়ে যেতে পারেন। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও তার বিশুদ্ধতায় শরীর-মন চাঙ্গা হবে। উপত্যকার মধ্যে ছোট ছোট ট্রেক করতে পারেন।
দরমা ভ্যালির প্রবেশদ্বার ধরচুলা। নিকটতম রেল স্টেশন টনকপুর থেকে ধরচুলা ২৫০ কিলোমিটার। ট্যাক্সি ও বাস পাওয়া যাবে। সুউচ্চ সব পাহাড় ও অনিন্দ্যসুন্দর সব উপত্যকার মধ্যে এই যাত্রাপথটি আপনাকে মন্ত্রমুগধ করে রাখবে। নিকটবর্তী বিমানবন্দর পন্থনগর। এখান থেকে ধরচুলা ৩১৭ কিলোমিটার।
থাকার জন্য ধরচুলায় হোটেল আছে। আর দরমা ভ্যালিতে থাকার জন্য গ্রামগুলিতে রয়েছে হোমস্টে। দনতু গ্রামে আমার বাড়িটি একইসঙ্গে একটি অতিথিনিবাস বা হোমস্টে। নাম জাসুলি হোমস্টে। অন্য গ্রামেও হোমস্টে আছে।
দরমা উপত্যকায় বেড়াতে বা আদি কৈলাশ দর্শন-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৪১০৯ ৩৭৬০৩।
ফটোঃ লেখক।
লেখাটি অনুবাদ করেছেন করেছেন শান্তনু দত্তরায়।