Follow us
Search
Close this search box.

শ্রীনগরের কাছেই দাচিগাম জাতীয় উদ্যান

শ্রীনগরের কাছেই দাচিগাম জাতীয় উদ্যান

কাশ্মীর বেড়াতে আসেন লাখো মানুষ। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, দাচিগাম বনাঞ্চল তথা দাচিগাম জাতীয় উদ্যানে যান হাতে গোনা কিছু ভ্রমণার্থী। কাশ্মীরকে চেনার জন্য, পশ্চিম হিমালয়ের পাহাড়ি গাছগাছালি, বন্যপ্রাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য দাচিগাম অরণ্যের অন্তত কিছুটা অংশ বেড়িয়ে দেখা যেতেই পারে। শ্রীনগর শহর থেকে দাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বারের দূরত্ব মাত্রই ২২ কিলোমিটার।

জবরওয়ান পর্বতশ্রেণির অন্তুর্গত ১৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অনন্যসাধারণ এই আভয়ারণ্যের বিস্তার। উচ্চতা ৫,৫০০ ফুট থেকে ১৪,৫০০ ফুট। দাচিগ্রাম কথাটির অর্থ ‘দশটি গ্রাম’। জঙ্গলাকীর্ণ গ্রামগুলি একসময় ছিল কাশ্মীরের মহারাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র। অরণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ডগোয়ান নদী। কোলাহই পর্বত থেকে নেমে আসা বরফ গলা জলে পুষ্ট হাই-অল্টিটিউড মরসর লেক থেকে সৃষ্ট ডগোয়ান নদী দীর্ঘ সময় ধরে শ্রীনগরের পানীয় জল জুগিয়েছে। দাচিগাম অভয়ারণ্যের শীর্ষস্তরে মরসর লেকের আবস্থান। নদী নীচে নেমে এসেছে অরণ্যের মধ্যে দিয়ে। ছোট নদীটি ঝিলমের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

১৯৫১ সালে দাচিগামকে বন্যপ্রাণ অভ্যারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮১ সালে দাচিগাম জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। অরণ্যের মধ্যে রয়েছে অপূর্ব সব উপত্যকা, ঝরনা, পাহাড়ের ঢালে ঢালে পপলার, উইলো, ওক, চিনার, পাইন, পাম, বুনো চেরি, আখরোট, অ্যাপ্রিকটের জঙ্গল, নানা প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদের ঝাড়।

দাচিগামের অরণ্য বিপন্ন কাশ্মিরি লালরঙা হরিণ বা হাঙ্গুলের আবাস। ভারতে একমাত্র এই অরণ্যেই হাঙ্গুলের দেখা মেলে। আছে হিমালয়ের বাদামি ভাল্লুক, বুনো ছাগল, লেপার্ড, বন্য বিড়াল। পক্ষিকুলের মধ্যে রয়েছে হিমালয়ান মোনাল, হিমালয়ের কালো বুলবুল, কাশ্মীর ফ্লাইক্যাচার, সিনামন চড়ুই, রংবাহারি ময়ূর প্রভৃতি। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ২৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এ অরণ্যে।

টুরিস্টরা পায়ে হেঁটে বা ব্যাটারিচালিত ছোট গাড়িতে লোয়ার দাচিগামে বেড়াতে পারেন। আপার দাচিগামে যান ট্রেকাররা। শ্রীনগরের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মহাদেব পিকে ট্রেক করে যেতে হয় দাচিগাম অরণ্যের মধ্যে দিয়ে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে পিচঢালা রাস্তা। রাস্তার দু’ধারে ঘন কনিফারাস অরণ্য। নদীপ্রবাহ, ঝরনার কলধ্বনি শোনা যাবে ওই রাস্তা ধরে চলতে চলতে। সে এক গা ছমছমে পরিবেশ। জঙ্গলের গভীরে শুধু পাখির ডাক জীবনের ধ্বনি।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কিছুটা এগিয়ে পৌঁছানো যায় অ্যানিম্যাল রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে। কয়েকটি বন্যপ্রাণী সেখানে সব সময়েই দেখা যায়। আছে কাশ্মীরের বিখ্যাত রেনবো ট্রাউট ব্রিডিং ফার্ম। নানা আকারের ট্রাউট দেখা যাবে এখানে।

শ্রীনগর ভ্রমণে নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যুক্ত করে দাচিগাম। অরণ্যে প্রবেশের জন্য ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনের পারমিশনের দরকার হয়। সেটা পাওয়া যায়। এন্ট্রি ফি লাগে। পার্কের গেটের কাছ থেকেই ব্যাটারিচালিত গাড়ি পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে নেবেন, অন্যথায় পায়ে হেঁটেই বেড়ান। সেটা আরও রোমাঞ্চকর হবে। অন্তত চারটে ঘন্টা দাচিগাম অরণ্যে বেড়ানোর জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। সে হবে এক স্মরণীয় অরণ্য ভ্রমণ, এ কথা বলতে পারি।

ফটোঃ লেখক

তপন মুখোপাধ্যায় পর্যটন সংস্থা হিমালয়ান জার্নিজ-এর কর্ণধার।
বসবাস জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে। কার্যালয়ঃ শ্রীনগর ও কলকাতা।
তপনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৬২৯০ ৩৬৩ ০৪১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *