কঠিন করোনা কাল তখন। বছরটা ২০২০। বাতাসে হিমের পরশ লেগেছে সবে। এ সময় পাহাড়ে যাই সাধারণত। সেটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওদিকে বাইরে বেরনোর জন্য পা দুটো নিশপিশ করছে। ঠিক করলাম, সমুদ্রের কাছে যাব। ঘরের কাছেই যাব, কিন্তু সেই ভ্রমণ ঠিক গতানুগতিক হবে না, ভ্রমণে থাকবে কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারের ছোঁয়া । সঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হল, সমগ্র গঙ্গাসাগর দ্বীপটি উপকুল বরাবর পরিক্রমা করব এবং যদি সম্ভব হয় ক্রমে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হতে থাকা ঘোড়ামারা দ্বীপটিকেও কাছ থেকে দেখব।
পরিকল্পনা ছকতে গিয়ে দেখলাম, একমাত্র কপিলমুনির মন্দিরের আশেপাশে থাকার জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও আমরা লজ বা গেস্টহাউস পাব না। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাত্রিবাসের জন্য সমুদ্রের পাশে জেলেবস্তি, সাইক্লোন শেল্টার বা গ্রামের বাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়তো হয়ে যেতে পারত, তবে এই মহামারীর পরিস্থিতিতে সেই আতিথেয়তা গ্রহণ বা প্রদান উভয় তরফ থেকেই উচিত হবে না বলে মনে হয়েছিল। তাই, তাঁবু এবং রান্নার সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা হল।
দলে ছিলাম তিনজন, প্রথম জন অংশু দত্ত, আমাদের প্রিয় অংশুদা, যিনি দ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখেছেন । অংশুদা সঙ্গে প্রচুর মাস্ক নিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য। দ্বিতীয় জন সুজয় দলুই, যিনি আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ জিনিসপত্র বহন করেছেন এবং সারাক্ষণ আমাদের হাসিঠাট্টায় মাতিয়ে রেখেছিলেন, তৃতীয় ব্যক্তি আমি, দায়িত্ব ছিল পথ দেখানো আর রান্না করা।
দিনলিপি
২৭ নভেম্বর (২০২০) পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ দিন চলে এসেছিলাম ধর্মতলায়। অংশুদা পৌঁছে গিয়েছিল আগেই। ধর্মতলার বাসগুমটি থেকে এস বি এস টি সি-র বাসে করে আমরা রওনা দিই কাকদ্বীপের উদ্দেশে । পথে আমতলা থেকে সুজয় সঙ্গে মিষ্টি, মোয়া এবং বাড়ি থেকে বানানো পরোটা আর ডিমের কারি নিয়ে আমাদের সাথে যোগ দিল হারঊড পয়েন্ট থেকে টোটো করে আমরা গেলাম এস পি অফিসে। সেখান থেকে দ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়গুলি মিটিয়ে আমরা চলে এলাম লট-৮ ফেরিঘাটে । ফেরিঘাটে জোয়ারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল । সুজয়ের নিয়ে আসা খাবারদাবার আত্মসাৎ করে, সূর্যাস্তের ছবি তুলে সময় কাটাতে থাকি এবং তখনই ঠিক করি, আমরা প্রথমে ঘোড়ামারা দ্বীপ যাব, তারপর গঙ্গাসাগর পরিক্রমা করব।
সন্ধ্যা হয় হয়, ভেসেলে চেপে ঘোড়ামারা অভিমুখে রওনা দেওয়া গেল । সঙ্গে বড়ো রুকস্যাক দেখে কৌতুহলী কয়েকজন সহযাত্রী আমাদের গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বিষয়টি খুলে বললাম। ওঁরা একটু অবাক হলেন প্রথমে। তারপরেই এগিয়ে এলেন সহায়তায়। জানা গেল, ঘোড়ামারা দ্বীপে বিশালাক্ষী মন্দিরের সামনে একটা ফাঁকা মাঠ আছে, যেখানে জল থেকে শুরু করে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটের ব্যবস্থাও হয়ে যেতে পারে। সেইমতো আমরা ঘোড়ামারা দ্বীপে পৌঁছে বিশালাক্ষী মন্দিরের সামনে তাঁবু করি। দ্বীপের মানুষজন নিজের থেকে এগিয়ে এসে আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করলেন। গ্রামেরই একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, অরুণ প্রামানিক মহাশয় ওনার বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন। অরুণবাবুর কাছ থেকে ঘোড়ামারা দ্বীপের অনেক অজানা কথা জানা গেল। রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে যখন ঘুমাতে যাই তখন ঘড়িতে রাত দশটা।
২৮ নভেম্বরঃ এইদিন সকালে দ্বীপ পরিভ্রমণের সঙ্গে চললো মাস্ক বিলি। দেখলাম জলের দাপটে কেমন সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের জমি। সেইসঙ্গে বিলীন হচ্ছে দ্বীপের বাসিন্দাদের সম্বল ও আশাভরসার জায়গাগুলোও।
পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে অনেকেই অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন আশ্রয়ের খোঁজে, পেটের টানে। আমফানের তান্ডবের চিহ্নগুলো এখনো দগদগে হয়ে আছে। বড় বড় গাছ, বাড়িঘর ধুলিসাৎ হয়েছে। উর্বর মাটিতে পান চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এই দ্বীপের বাসিন্দারা। গড়ে তুলেছিলেন পানের বরজ। আমফানের তান্ডবে তা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। নতুন করে পানের বরজগুলিকে জীবন দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দ্বীপটির পশ্চিম দিকে কিছু বোল্ডারিং থাকলেও উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে (নয়াচরের দিকে) দ্রুত ভাঙ্গন গ্রামবাসীদের আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে।
দ্বীপটিতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪-৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। আছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষার জন্য দ্বীপের ছেলেমেয়েদের নদী পার হয়ে অন্যত্র যেতে হয়। চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থাও সীমিত।
এত সমস্যার মধ্যেও দ্বীপের মানুষগুলির মধ্যে আন্তরিকতার এতটুকু অভাব দেখিনি। কখনো আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে চা খাইয়েছেন, কখনো বা সঠিক পথ বলে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দ্বীপটি থেকে ফিরে আসার সময় মনে মনে বলেছিলাম, আবার আসব এখানে।
দ্বীপ পরিক্রমা শেষ করে সকাল সাড়ে এগারটার ভেসেলে আমরা লট-৮ পৌঁছে চলে আসি গঙ্গাসাগরের প্রবেশদ্বার কচুবেড়িয়াতে। হোটেলে লাঞ্চ সেরে আমরা দ্বীপটির ডানদিক থেকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) হাঁটা শুরু করি। এদিন আমরা খুব বেশি এগতে পারিনি। বিকেলে ক্ষিরকুলতলা নামে একটি জায়গায় পৌঁছে ওখানেই তাবু করি। খুব সুন্দর জায়গাটা। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসে ঢাকা জমি, তারপর ম্যানগ্রোভ অরণ্য আর সমুদ্র। এক কথায় অসাধারণ। এমন সুন্দর পরিবেশে চন্দ্রালোকে বসে নৈশভোজের স্মৃতি চিরকাল মনে থাকবে।
আজকের হাঁটাপথ: সমগ্র ঘোরামাড়া দ্বীপ → কচুবেড়িয়া → কাশতলা → ফুলডুবি → ক্ষীরকুলতলা। পথের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৮ কিমি।
২৮ নভেম্বরঃ সকালে কফি-বিস্কুট দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। ডানদিকে একটা ম্যানগ্রোভের জঙ্গল পেরিয়ে আমরা সমুদ্রের তীরে এসে পড়লাম। ডানদিকে সমুদ্রকে সঙ্গী করে হাঁটতে থাকি। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ। দূরে দূরে নৌকা ভাসছে সমুদ্রে। আকাশে পাখির ঝাঁক । আর দেখি মানুষজনের ব্যস্ততাহীন গ্রাম্য জীবনযাপন। রাতে ভিজিয়ে রাখা ছোলা বাদাম খেতে খেতে এগিয়ে চলি। মাঝে মাঝে বিশ্রাম। চলতে থাকে নিজেদের মধ্যে গল্প আর মজা।
ছোট ছোট নানা গ্রাম পেরিয়ে একসময় পৌঁছাই কৃষ্ণনগর নামের একটা গ্রাম। সেখানে আলের ওপর একটা ঝাউগাছের নীচে তাঁবু লাগাই। দূরের মাঠে ফুটবল খেলা চলছে। সামনে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠ । একপাশে খাঁড়ি। আরেক দিকে সমুদ্র। দৃশ্যপট এককথায় অসাধারণ।
এখন পূর্ণিমা । সন্ধ্যা নামতেই বিশাল চাঁদ উঠলো। খাঁড়িগুলোতে জলের পরিমাণ বাড়তে থাকল। সমুদ্র থেকে নৌকাগুলো ফিরে আসছে। রাতে ছাতু খেয়ে ঘুমোতে বেশি সময় লাগেনি।
যেমন ছিল এ দিনের হাঁটাপথ: সাঁপখালি → চাঁপাতলা → মন্দিরতলা → চক্ ফুলডুবি → কৃষ্ণনগর। দূরত্ব কমবেশি ১৮ কিলোমিটার।
৩০ নভেম্বরঃ সকালে যথারীতি কফি, বিস্কুট খেয়ে আর সঙ্গে ছোলা ও বাদাম নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। আজ রাস্তাটা একটু কঠিন, খাঁড়ির ধার দিয়ে চলার সময় জঙ্গল কেটে অনেক জায়গায় পথ করতে হলো, বেশ কয়েকবার পায়ে বাবলা কাঁটাও ফুটলো।
দুপুরের দিকে একটা জায়গায় বসে লেবুজল আর কিছু শুকনো খাবার খেয়ে আবার পথ চলা শুরু । একটা খাঁড়ি পার হওয়ার সময় একজন মাঝিভাই আমাদের খুব সাহায্য করলেন। এই সাহায্যটা না পেলে আমাদের হয়তো আরো ১০-১২ কিলোমিটার বেশি পথ হাঁটতে হত। খাঁড়িটা পার হয়ে গেলেও কাদা আমাদের ছাড়েনি। হাঁটু পর্যন্ত কাদা মেখে গ্ৰামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষজন অবাক হয়ে দেখছিল আমাদের।
যাইহোক, সন্ধ্যার কিছু আগে আমারা এসে উপস্থিত হই হাতিপিঠা নামে একটি গ্রামে। একটি মন্দিরের পাশে টেন্ট করে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হল। পাশেই জল ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়নি।
আজকের পথ: নরহরিপুর → মায়াগোয়ালিনী ঘাট → চন্ডীপুর → হাতিপিঠা। দূরত্ব কমবেশি ১৯ কিলোমিটার।
১ ডিসম্বরঃ সকালে উঠে গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে মাস্ক বিলি করে আমরা এগিয়ে চলি। একে একে জেলেবস্তি, লাইটহাউস, মোহনা পার হয়ে পৌঁছাই গঙ্গাসাগরের কপিলমুনির মন্দিরে। মন্দিরে পুজো দিয়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা আবারও এগিয়ে চলতে থাকি।
বেশ কিছুটা এগিয়ে পড়ল এক খাঁড়ি। পার হতে হবে। নৌকা মিলল না। এক দাদার দেখিয়ে দেওয়া অপেক্ষাকৃত অগভীর অংশ দিয়ে কোমর পর্যন্ত ভিজে, কাদা মেখে খাঁড়িটা পেরনো গেল।
আরও এগিয়ে আমরা যখন ধবলাট বাঁধের ওপর হাজির হলাম তখন সূর্যদেব পাটে বসেছেন। শেষ বিকেলে একজন মাঝিদাদা সমুদ্র থেকে সদ্য ধরে আনা কিছু মাছ আমাদের দিয়ে গিয়েছিলন, অনেক অনুরোধেও টাকাপয়সা নিল না। রাতে সমুদ্রের পাড়ে বসে গরম গরম মাছ ভাজা সহকারে কফি খাওয়ার সেই স্মৃতি সহজে ভোলবার নয়।
আরও রাতে কিছু মানুষ আসেন আমাদের এমন জায়গায় থাকার কারণ জানতে। অংশুদা সবটা বুঝিয়ে বলায় ওঁরা আশ্বস্ত হয়ে ফিরে গেলেন।
পথ: বেগুয়াখালি → সাগর → গঙ্গাসাগর কলোনী পাড়া → মনসা মন্দির → বনবিবির মন্দির → ধবলাট।। দূরত্ব কমবেশি ১৮ কিলোমিটার।
২ ডিসেম্বরঃ দিন শুরু হল তাঁবুর মধ্যে থেকে সূর্যোদয় দেখে । সূর্যের গোলাপি আলো ছড়িয়ে পড়ল সমুদ্রে। গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখলাম সে দৃশ্য। অনেক দিন মনে থাকবে। তাঁবু গুটিয়ে আবার যাত্রা শুরু হল।
এ দিনের সবচেয়ে মজার ঘটনা, ষাঁড়ের তাড়া খাওয়া। দায়ী মনে হয় সুজয়ের ব্যাগের টকটকে লাল রঙের কভার, যাইহোক, সেই যাত্রায় বেঁচে তারপর আবার হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার আগে এসে উপস্থিত হই সুমতিনগর গ্রামে।
আমাদের কথা শুনে কিছু গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। একজন স্বহৃদয় ব্যক্তি সেই সন্ধ্যাতেই পুকুর থেকে মাছ ধরে, গাছ থেকে বেগুন তুলে আমাদের রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পথ যেমন ছিল: শিবপুর → মনসা বাজার → চিমাগুড়ি → বঙ্কিমনগর → সুমতিনগর। দূরত্ব কমবেশি ২১ কিলোমিটার।
৩ নভেম্বরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে সামনের একটি দোকানে প্রাতরাশ সারা গেল। তারপর মাস্ক বিতরণ করে জড়ো হওয়া সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার পথ চলা শুরু করলাম। পথ খুবই সুন্দর । কখনো কখনো মনে হতে থাকলো আমরা যেন সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি।
হঠাৎই পেছন থেকে সাইকেলে করে এসে এক ব্যক্তি আমাদের হেঁটে চলার কারণ জানতে চাইলেন। সব জানার পরে উনি জানান, ওনার বাড়ি সামনেই, আমরা যেন ওনার বাড়িতে একটু চা খেয়ে যাই । সেই অনুরোধ রক্ষা করে আমরা এগিয়ে চলি। পথে মৃত্যুঞ্জয়নগরে গ্রামবাসীরা আমাদের পথ আটকান এবং গাছ থেকে সদ্য পাড়া ডাব খাইয়ে তবে ছাড়েন।
আবারও এগিয়ে চলা। আজ আমাদের হাঁটার শেষ দিন। আমাদের শক্তিও প্রায় শেষ । অবশেষে বেলা আড়াইটের সময় কচুবেড়িয়ায় পৌঁছে শুনি শেষ ভেসেল চলে গেছে। ভাঁটা শুরু হয়েছে। পরের ভেসেল রাত সাড়ে আটটায়। আমাদের তো মাথায় হাত।
কী আর করা যাবে, অতঃপর দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে জেটিঘাটে এসে শুনি একটি নৌকা ছাড়বে, ভাড়া তো বেশি লাগবেই, ওপারে পৌঁছানোর গ্যারান্টি নেই । আমরা তাতেও রাজি। কিছুক্ষন নৌকা চলার পর দেখি একটা হৈ-হট্টগোল বেঁধেছে, সবাই হঠাৎ করে কেমন যেন ব্যস্ত হয়ে ঊঠল । আমরা মুড়িগঙ্গা নদীর প্রায় মাঝখানে। মাঝি জানাল, নৌকা আর যাবে না, সবাইকে ওখানেই নেমে হেঁটে ওপারে যেতে হবে, নৌকা নাকি চরে আটকে গেছে । হায় ঈশ্বর, এটাও বাকি ছিল! কচুবেড়িয়াতে পৌঁছে যখন ভাবছিলাম ট্রেকিং শেষ, তখন একবারের জন্যও ভাবিনি আসল ট্রেকিং তখনো বাকি । অতঃপর বেশ কয়েকবার আছাড় খেয়ে কাদা মেখে সন্ধ্যায় আমরা লট-৮ পৌছালাম । তারপর টোটোতে কাকদ্বীপ, সেখান থেকে বাস ধরে ডায়মন্ড হারবার, তারপর ম্যাজিক গাড়ি ধরে আমতলায় সুজয়ের বাড়ি।
এদিনের হাঁটাপথ: মৃত্যুঞ্জয়নগর → কয়লাপাড়া → গোবিন্দপুর → রাধাকৃষ্ণপুর → দেবীমথুরাপুর →শিকারপুর → মুড়িগঙ্গা সাইক্লোন শেল্টার → চাস মোড় → তিলপাড়া → কচুবেড়িয়া। দূরত্ব কমবেশি ১৯ কিলোমিটার।
০৪–১২–২০২০
সকালে আমতলা থেকে বাস ধরে শিয়ালদহ, তারপর ট্রেন ধরে বাড়ি । নিজেকে কিছুদিন পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছিলাম এবং সুস্থও ছিলাম।
পরিশেষে যে কথাটা স্বীকার করতেই হয় তা হল এই যে, সমগ্র পথে গ্রামবাসীদের সাহায্য, কাকদ্বীপের এস পি অফিস এবং গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানার সহযোগিতা ব্যতীত এই ট্রেকটি আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হত না।
সকলকে অনেক ধন্যবাদ।
ফটোঃ লেখক।