কংসাবতীর জলরাশিতে এখন, এই বর্ষায়, নানা রঙের মেঘের ছায়া ভেসে বেড়ায়। জঙ্গলের সবুজ ঘন হয়। বাঁকুড়া জেলায় ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে অনুচ্চ পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা মুকুটমণিপুর বর্ষায় এক প্রাণমাতানো ছবি আঁকে। মধ্যমণি বিশাল এক জলাধার। কংসাবতী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে ৮৬ বর্গ কিলোমিটারের এই জলাধারের। বাঁধটি মাটি দিয়ে নির্মিত। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ এটি।
ওই বিস্তৃত জলরাশিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের শোভা মন ভরিয়ে দেবে। এই বর্ষার মরসুমে মেঘের ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে পড়া রোদ্দুরের ঝিলিকে উদ্ভাসিত হয় সুন্দর। আর অঝোর বৃষ্টি যখন, হাতে চায়ের কাপ নিয়ে হোটেলের ব্যালকনি বা জানলায় চোখ রেখে বসুন। ক্রমশ চারপাশের বর্ষাস্নাত পরিবেশ আপনাকে আচ্ছন্ন করবে। আর দলে কয়েকজন থাকলে জমে উঠতে পারে তুমুল আড্ডা।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় বা বৃষ্টি খানিক ধরলে বাঁধের রাস্তা ধরে খানিকটা হেঁটে আসতে পারেন। গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের রাস্তা আছে জলাধার বরাবর। চাইলে বোটিং করতে পারেন। জলাধারের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বীপ, বনপুকুরিয়া। ফেরিঘাট থেকে দ্বীপ যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, বাঁধের রাস্তায় প্রবেশের জন্য পাস সংগ্রহ করতে হয় ড্যাম-সংলগ্ন অফিস থেকে।
আশেপাশে
মুকুটমণিপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অম্বিকানগর থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে রয়েছে অম্বিকাদেবীর প্রাচীণ মন্দির। মুকুটমণিপুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পরেশনাথের মন্দির। ৭০০ বছর আগে মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। রাঢ়বঙ্গে জৈন ধর্মের বিস্তার ঘটেছিল ৮০০-৯০০ বছর আগে।
অম্বিকানগরের কাছাকাছি মুসাফিরানা ভিউপয়েন্ট। মুকুটমণিপুর থেকে দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। এই ভিউপয়েন্ট থেকে মুকুটমণিপুরকে দেখা যায় পাখির চোখে। দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি, অরণ্য, পাহাড়, সবমিলিয়ে চোখের সামনে এক রূপকথার রাজ্য ফুটে ওঠে মুসাফিরানা ভিউপয়েন্টে গিয়ে দাঁড়ালে।
যাওয়ার পথ
হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস, কলকাতা/শালিমার স্টেশন থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেসের মধ্যে কোনও ট্রেন ধরে চলে আসতে হবে বাঁকুড়া স্টেশনে। দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে খাতরা হয়ে মুকুটমণিপুর ৫৫ কিলোমিটার। যাওয়ার জন্য বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পাওয়া যাবে। প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে বাসেও বাঁকুড়া চলে আসা যায়। নিজস্ব গাড়িতে আসতে চাইলে ডানকুনি, বর্ধমান, বাঁকুড়া হয়ে মুকুটমণিপুর চলে আসা যায়। কলকাতা থেকে এ পথের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থাঃ
পিয়ারলেস রিসর্ট মুকুটমণিপুর, ফোনঃ ৯৯৩২৭-৮৭৯৯৩। আরণ্যক রিসর্ট, ফোনঃ ৯১৬৩৩-৯৫২৬৩। হোটেল অপরাজিতা, ফোনঃ ৯৪৭৪১-৮৫৮৬৬। সোনাঝুরি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র, ফোনঃ ৭৬০২০-৮৮০৩৬। হোটেল আম্রপালী, ৯৪৩৪২-২৪৬৭৪, ৯৫৪৭৭-২০৩২৩।