Follow us
Search
Close this search box.

বো ব্যারাকসের ক্রিসমাস ও বর্ষবরণ উদযাপন

বো ব্যারাকসের ক্রিসমাস ও বর্ষবরণ উদযাপন

কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়া বো ব্যারকসের ক্রিসমাস উদযাপনে একটা নিজস্ব ঘরানা আছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি সাতটি বাড়ি ও তার রাস্তাঘাট নিয়ে একটা গোটা পাড়ার পরিসর সেই বো ব্যারাকস এলাকা। ডিসেম্বরের দ্বিতিয়ার্ধ থেকে নববর্ষের আগমন পর্যন্ত সে-পাড়া উৎসবমুখর। এই সময়টায় বো ব্যারাকস একবার ঢুঁ মারতে পারলে এক অন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া যায়। কলকাতার বৌবাজার এলাকার পশ্চিমাংশে, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে হলে বৌবাজার পুলিশ স্টেশনের পিছনে (সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ বা এখনকার চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ থেকে একটু ভিতরে ঢুকতে হয়) কলকাতার পুরনো অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়া বো ব্যারাকস। নিউ মার্কেট থেকে বো ব্যারাকসের দূরত্ব ২ কিলোমিটারের কম।

এক সময়ে বো ব্যারাকসের এই বাড়িগুলো ছিল ব্রিটিশ সেনা নিবাস। তৈরি হয়েছিল ১৯১৮ সালে। হাওড়া স্টেশনের স্থপতি হলসে রিকার্ডো বো ব্যারাকসের নকশা তৈরি করেছিলেন। স্থাপত্যে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শহর তৈরির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। চওড়া গাঁথুনির তিনতলা বাড়ি। বাইরের দেওয়ালের রং লাল, দরজা-জানলার রং গাঢ় সবুজ। পরে ব্রিটিশ সেনারা ফোর্ট উইলিয়ামে চলে গেলে এই বাড়িগুলিতে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষের আবাস হয়ে ওঠে। কিছু খ্রিস্টান চিনা, অল্প কিছু খ্রিস্টান বাঙালি ও পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষও বসবাস করেন বো ব্যারাকস এলাকায়। বলা হয়, এক কলকাতার মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো কলকাতা। বো ব্যারাকস সেরকমেরই ‘আরেক কলকাতা’।

পুরনো এলাকা, পুরনো বাড়িঘর, পুরনো রাস্তা, গলি ইত্যাদি এই ক্রিসমাসের সময়টায় যেন জাদুবলে পাল্টে যায়। রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গল বেলের সুর, খাদ্য-পানীয়ের পসরা নিয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বো ব্যারাকস জমজমাট। উৎসব চলে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত।

বো ব্যারাকসের কিছু পরিবারে নিজ নিজ ঘরানা মেনে ওয়াইন তৈরি করে এ সময়ে। কিনতেও পাওয়া যায়। বো ব্যারাকসের ঘরে তৈরি কেকে থাকে দীর্ঘ ঐতিহ্যের ছোঁয়া। তার অন্য স্বাদ। ভিন্নতর ঘ্রাণ।

বো ব্যারাকসে সান্তা আসেন হাতে টানা রিক্সায় চড়ে। পাড়ার ছেলেপেলেরা রিকশা টানে। বো ব্যারাকসের নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ক্রিসমাস পালন করতে বো ব্যারাকসে ফেরেন।

ক্রিসমাসে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট জমজমাট। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে উৎসবের আবহে গা ভাসাতে। নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় পার্ক স্ট্রিটে। বো ব্যারাকসের ক্রিসমাস উদযাপনের ওই ঘরোয়া রূপটিও মানুষের মন কেড়েছে। ভিড় হয় এখানেও। বো ব্যারাকস ও সংলগ্ন এলাকাগুলি কলকাতার ‘কালচারাল মেল্টিং পট’ নামে খ্যাত। এখানেই কলকাতার পুরনো চিনা পাড়া, এখানেই সকালে বসে চিনা খাদ্যের বাজার। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, চিনা, পার্সি, বাঙালি, গুজরাটির মতো নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস এই অঞ্চলটিতে। এখানেই ভারতের প্রাচীনতম পারিবারিক রেঁস্তোরা ‘এউ চিউ’-এর অবস্থান। পুরনো সব চিনা মন্দির রয়েছে বো ব্যারাকসের আশেপাশে। অনেকের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে ভালোই লাগবে।

Comments are closed.