Follow us
Search
Close this search box.

বুমলা পাস হয়ে ভারত-চিন সীমান্তে

বুমলা পাস হয়ে ভারত-চিন সীমান্তে

আজ ২৭ এপ্রিল, ২০২৪। ২৫ তারিখ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে পৌঁছেছি। গতকাল তাওয়াংয়ে সাইটসিয়িং হয়েছে। আগের দুই পর্বে গুয়াহাটি থেকে এ পর্যন্ত অরুণাচলে বেড়ানোর কথা জানিয়েছি। আজ চলেছি বুমলা পাস হয়ে চিন তথা তিব্বতের সীমান্তে।

সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে এ দিনের ভ্রমণে বেরিয়ে পড়া গেল। যথারীতি আঞ্চলিক গাড়ি ভাড়া নিতে হল। গুয়াহাটি থেকে নিয়ে আসা আমাদের গাড়িটি বিশ্রামে রয়েছে। তাওয়াং থেকে বুমলা পাস হয়ে চিন তথা তিব্বত সীমান্ত পর্যন্ত যাওয়া ও তাওয়াংয়ে ফেরার গাড়িভাড়া নিল ৬,০০০ টাকা।

আজকের যাত্রায় প্রথম গন্তব্য ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় সাঙ্গেস্টার সো লেক। এ পথে ডাইনে-বাঁয়ে আরও লেক আছে। পথে ‘ওয়াই’ (Y) জংশন নামে একটা জায়গা পড়ে। ওয়াই জংশন পয়েন্ট বলা হয়। তাওয়াং শহর থেকে ওয়াই জংশন পয়েন্ট ২২ কিলোমিটার। এই জংশন পয়েন্ট থেকে একটি পথ গেছে সাঙ্গেস্টার সো লেকের দিকে। ওয়াই জংশন থেকে সাঙ্গেস্টার সো লেক ১৪ কিলোমিটার। ওই পয়েন্ট থেকে আরেকটি পথ গিয়েছে বুমলা পাস আভিমুখে।

মাধুরী লেক নামেও পরিচিত এই হাই-অল্টিটিউড সাঙ্গেস্টার সো লেকটি। হিন্দি ‘কোয়েলা’ সিনেমায় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন এখানে। তারপর থেকে সাঙ্গেস্টার সো-র জনপ্রিয় নাম মাধুরী লেক।

লেখকের অসম-অরুণাচল ভ্রমণের আগের দুই পর্ব
‘ভ্রমণ অরুণাচলে’ https://torsa.in/arunachal-assam-travel/
‘তাওয়াংয়ে ইতিহাস, বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রকৃতি একসঙ্গে বসত করে’ https://torsa.in/tawang-travel/

তাওয়াং শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে সাঙ্গেস্টার সো-র অবস্থান। পাহাড়ে পরিবেষ্টিত টলটলে জলের লেকটির পারে দাঁড়িয়ে খানিক আনমনা হয়ে পড়েছিলাম। লেকের জলে পাহাড়শ্রেণির প্রতিফলন। উত্তর সিকিমের গুরদোংমার লেকের দৃশ্য ভেসে উঠছিল মনের পটে। সে-ও তো ভৌগলিক দিক থেকে তিব্বত মালভূমির অংশ। কত বৃহৎ আমাদের দেশটা। গাড়ির চালকের ডাকে একটা জাগ্রত ঘুম থেকে উঠলাম যেন।

এরপর গাড়ি ওই ওয়াই জংশন পয়েন্ট থেকে বুমলা পাসের পথ ধরল। তাওয়াং শহর থেকে সরাসরি বুমলা পাস কমবেশি ৩৭ কিলোমিটার। বুমলা পাস যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতির দরকার হয়। তাওয়াং জেলার ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। অনুমতিপত্রে সামরিক বাহিনীর সিলমোহরও থাকে। কোনও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে বেড়াতে গেলে সেই সংস্থা থেকেই অনুমতির ব্যবস্থা করা হয়। তাওয়াংয়ের হোটেলগুলিও বুমলা পাস যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে থাকে। শুধু ভারতীয় নাগরিকরাই বুমলা পাস যাওয়ার অনুমতি পান। শনি ও রবিবার বুমলা পাস যাওয়ার পথ বন্ধ থাকে। প্রবল শীতেও বিপুল তুষারের কারণে বুমলা পাস যাওয়া যায় না।

দ্রুত পথের উচ্চতা বাড়তে থাকল। বাড়তে থাকল ঠান্ডাও। বুমলা পাস একটি উচ্চ পাহাড়ি পথ। এ পথের গড় উচ্চতা ১৫,০০০ ফুট। তিব্বত তথা চিনের সোনা কাউন্টির (Tsona County) সোনা জং (Tsona Dzong) শহর ও অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের মধ্যে যোগাযোগের এই পাহাড়ি পথ তথা পাস। উল্লেখ্য, ‘লা’ একটি তিব্বতি শব্দ, অর্থঃ ‘পাস’ বা পাহাড়শ্রেণির মধ্যে দিয়ে চলা পথ। বুমলা পাস এ পথের প্রচলিত পরিচিতি। বুমলা প্রাচীন পার্বত্য পথ। তিব্বত ও ভারতের মধ্যে মেষপালক, বণিক, অভিযাত্রীদের বুমলা পাস ধরে যাতায়াত ছিল বহুকাল ধরেই। ১৯৬২-র চিন-ভারত যুদ্ধে চিনা সেনারা পূর্ব ভারতে প্রবেশ করেছিল এ পথেই।

বুমলা বর্ডার পোস্ট এলাকায় পৌঁছালাম। ওদিকে তিব্বত তথা চিনের পাহাড়শ্রেণি। পাসের দু’দিকের পাহাড়গুলো সব বরফে ছয়লাপ। এখন, এই দুপুরে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অনেক সময় এই এপ্রিল মাসে বুমলা পাসে আসা যায় না বরফের কারণে। সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর বুমলা বেড়ানো যায় নির্বাধায়। নভেম্বর থেকে বরফে প্রায় অগম্য ওয়ে ওঠে বুমলা। আমরা এপ্রিলের শেষে আসতে পেরেছি, সেদিক থেকে আমরা একটু ভাগ্যবানই বটে।

ওপারে তিব্বত বা চিনের কাচিন, জেনডং প্রভৃতি জনপদ ৪-৫ কিলোমিটার। কী ভালোই না হতো যদি বুমলা পাস ধরে গড়গড়িয়ে তিব্বতে চলে যাওয়া যেত। সীমান্ত এলাকা থেকে এই বুমলা পাস ধরে ৪৩ কিলোমিটার পথ তিব্বতের সোনা জং টাউন। সোনা জং থেকে গুরদুং, লাসা হয়ে বেজিং পর্যন্ত চলে যাওয়া যায় হাইওয়ে ধরে। প্রকৃতি অনেকটাই ব্যবস্থা করে রেখেছে। সীমান্ত নামের ভেদরেখা মনুষ্য ‘সভ্যতা’ সৃষ্ট ব্যবস্থা।

বুমলা থেকে ফেরার পথে আরেকটি উচ্চ পার্বত্য লেক দেখা হল। পনকং টেং সো, সংক্ষেপে পৎসো লেক। লেককে বেড় দিয়ে রয়েছে তুষারাবৃত সব পাহাড়। আঞ্চলিক মনপা জনগোষ্ঠীর মানুষজন খুব মেনে চলেন এই লেকটিকে। দারুন সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ।

তাওয়াংয়ের হোটেলে ফিরলাম বিকেলে। কাল সকালে তাওয়াং ছাড়ব। বমডিলায় এক রাত থেকে পরের দিন কাজিরাঙার উদ্দেশে রওনা হব। এবারের বেড়ানোর শেষ পর্বের কথা আগামী লেখায়।

ফটো (উপর থেকে)
বুমলা পাস বর্ডার পোস্ট
সাঙ্গেস্টার সো লেক চত্বর
সাঙ্গেস্টার সো লেক
বুমলা পাসে লেখক
পৎসো লেক

ফটো তুলেছেন সুব্রত ঘোষ ও পাপিয়া ঘোষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *