পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা সবুজ এক উপত্যকা। পাহাড়ের ঢালে ঢালে চায়ের বাগান। সেখানে চরে বেড়ায় মেঘের দল। এ পাহাড়ে ছায়া তো ও পাহাড়ে রোদ্দুর। চারিদিকে সবুজের সাম্রাজ্য। বাতাসে বনজ আঘ্রাণ। নিশ্চুপ পরিবেশে পাখির ডাকে নতুন করে আবিষ্কৃত হয় হারানো সুর।
যাঁরা প্রকৃতির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার রূপ রস বর্ণ গন্ধে অবগাহন করতে চান, বুক ভরে টেনে নিতে চান বিশুদ্ধ বাতাস তাঁদের জন্য এ জায়গা। দু’-একটা দিন এখানে কাটাতে পারলে প্রাণশক্তি পুনরুজ্জীবীত হয়।
জায়গাটি পুবং। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ঘুম স্টেশন থেকে ৮ কিলোমিটার। মেঘের আড়ালে থাকা পুবংয়ে একবার ঢুকে পড়লে কোথায় হৈ হল্লা, গাড়ির হর্ন, আবর্জনা? পুবং যেন দূরদেশের এক দ্বীপভূমি।
রাতে পাইনের ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসতে পারে কোনও বন্যপ্রাণীর ডাক। পুবং-সংলগ্ন জঙ্গলে বসত করে ভাল্লুক, হরিণ, বুনো শুয়োর, প্যাঙ্গোলিন, ময়ূর, বনমুরগি, লেপার্ড। পুবং গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁরা লেপার্ড দেখে থাকেন। ভাবা যায়? ব্যস্ত ঘুম স্টেশন এলাকা থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের জঙ্গলে বিচরণ করে লেপার্ড।
চৌরাস্তা, চকবাজার ইত্যাদি নিয়ে যে দার্জিলিং শহর, তা থেকে কমবেশি ১৩ কিলোমিটার দূরে জোরবাংলো-সুখিয়াপোখরি ব্লকে মেঘের আড়ালে পুবং উপত্যকায় ১৯১৩ সালে পুবং টি এস্টেট গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠাতা নামী চা উৎপাদক সংস্থা ডানকানস।
সামগ্রিক পুবংয়ের একাংশে পুবং বস্তি। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবীকা চা-বাগানের নানা প্রকার কাজকর্মের ওপর নির্ভরশীল। মহিলাদের পাহাড়ের ঢালে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ভারসাম্য বজার রেখে দাঁড়িয়ে চায়ের পাতা তোলার কাজটি সহজ নয়।
এক স্কটিশ যুবক, নাম ওয়াল্টার ডানকান, দার্জিলিং পাহাড়ের প্রকৃতি, আবহাওয়া দেখে অবাক। শুরু করলেন বৃহত্তর দার্জিলিংয়ের নানা এলাকায় চায়ের চাষ। সংস্থার নাম ‘প্লেফেয়ার ডানকান কোম্পানি’। সে ১৮৫৯-এর কথা। ক্রমশ ডানকান নামডাক অর্জন করল। বর্তমানে পুবং টি এস্টেট ডানকান-গোয়েঙ্কা গ্রুপের আওতায় পরিচালিত হয়।
চায়ের বাগিচার কাজকর্মের জন্যই ১৯৩৫-এ গড়ে তোলা হয়েছিল একটি বাংলো। সামনে পহাড়ের সারি, কাছেই বালাসন নদী, একটু হেঁটে গেলে ঝরনা, পাহাড়ের ঢালে চায়ের বাগান আর জঙ্গল, এমন পরিবেশের মধ্যে ছবির মতো দ্বিতল বাংলোটির অবস্থান।
ব্রিটিশ আর্কিটেকচার। সামনে বিস্তৃত সবুজ লন। প্রশস্ত জানালা, চওড়া ব্যালকনি, ঘরে ঘরে ফায়ারপ্লেস, রুচিবোধের ছাপ। সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, বাগানের চায়ে আতিথেয়তার উষ্ণতা। পুবংয়ে এখানেই থাকার ব্যবস্থা। পুবং প্ল্যান্টার্স বাংলো বা পুবং টি এস্টেট বাংলোয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছে আধুনিকতা। ফ্রি ইন্টানেট পাওয়া যাবে।
লনে বসেই কত সময় কেটে যাবে। নানা রকমের পাখি আছে এখানে। পুবংয়ের চা-বাগান ও জঙ্গল-ঘেষাঁ পথ ধরে এক চক্কর বেড়িয়ে আসা একটা অভিজ্ঞতা বটে। টি-ফ্যাক্টরির কর্মকান্ড দেখে আসা যায়। কাছেই পুবং ফটক ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে দার্জিলিং ও সিকিমের বিস্তৃত অঞ্চল নজরে আসে। আর দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
আর কাছাকাছি তো রইলই শহর দার্জিলিং, মল-চত্বর, কেভেন্টারস, গ্লেনারিজ, টয়ট্রেন ইত্যাদি।
দুটো বা অন্তত একটা রাত পুবংয়ের বাংলোয় কাটানো গেলে সে যে প্রকৃতই একটি দুর্দান্ত বেড়ানো হবে তা নিশ্চিত।
বাংলো বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ নম্বরঃ ৯৮৩০৪ ২৩২৪৬, ৯৬৭৪৯ ০০১০১।