Follow us
Search
Close this search box.

ব্রহ্মকমলের অঙ্গনে

ব্রহ্মকমলের অঙ্গনে

ফুলের উপত্যকায় গিয়েছিলাম গতকাল। ‘বৃষ্টিধৌত ফুলের উপত্যকায়’ শীর্ষক লেখাটিতে সেই যাত্রা ও ফুলে ছাওয়া উপত্যকা (ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স) দর্শনের কথা জানিয়েছি। আশ্চর্য সেই উপত্যকা থেকে ফিরেছিলাম শেষ বিকেলে। রাত্রিবাস হয়েছে যথারীতি ঘাঙ্গারিয়ায়।
আজ যাব হেমকুণ্ড সাহিব। আর মনে মনে একটা অভিলাষ রয়েছে, যদি ব্রহ্মকমলের দর্শন পাওয়া যায়। বর্ষার মরসুম (সেপ্টেম্বর, ২০২৪)। ঘাঙ্গারিয়ার আকাশ মেঘলা।

গতকাল ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স যাওয়ার পথে দেখেছি হেমকুণ্ড যাওয়ার রাস্তা। ঘাঙ্গারিয়া থেকে রাস্তাটা বেশ খানিকটা আসার পর দু’ভাগ হয়েছে। হেমকুণ্ড সাহিব যাওয়ার এই রাস্তা বেশ খাড়াই। ভেবে দেখলাম ও পথে হেঁটে যাওয়া আমার কম্মো নয়। সকাল থেকেই আবহাওয়া খুব একটা সুবিধাজনক নয়। ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শুধু আমি নই, আমাদের মধ্যে আরো চার-পাঁচ জন ঘোড়ার যাত্রী পেয়ে গেলাম। জনাদুয়েক যাচ্ছে পিট্টুতে। মানে কুলির পিঠে চড়ে। যারা ট্রেক করে যাবে, তারা সবাই আমাদের আগে বেরিয়ে পড়ল।

আমরা চললাম ঘোড়ায়। কিছুক্ষণ চলার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামল। শরীরে রেনকোট গলিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। চোখে পড়ছে দু’-একটা নীল পপি ফুল। যত যাচ্ছি পথ খাড়াই হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তাও বেশ পিচ্ছিল। ঘোড়ার পিঠে বসে কোন রকমে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছি। নীচে ঘাঙ্গারিয়া এখন অনেক অনেক দূরে, ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে।

লেখকের ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স-বিষয়ক আগের দুই পর্বের লেখা পড়তে পারেন নীচের দুই লিঙ্কে –

https://torsa.in/haridwar-to-ghangaria/

বৃষ্টিধৌত ফুলের উপত্যকায়

আরও খানিক এগনোর পরে এ পথে চলায় অভ্যস্ত ঘোড়া দাঁড়িয়ে পড়ল। জায়গাটায় সারি দিয়ে দোকান। স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি। জেনে খুশি হলাম যে আমরা অর্ধেক রাস্তা পেরিয়ে এসেছি। চা খেয়ে আমরা সবাই আবার উঠে পড়লাম যে যার ঘোড়ায়। কিছু দূর যাওয়ার পর আবিষ্কার করলাম আমাদের ঘোড়ার চালক বদল হয়েছে। এর বয়স কম। বাচ্চা ছেলে বলা চলে। আমরা ওর নাম দিলাম ছোট্টু। আমাদের সঙ্গে কথাও বলছে বেশ।

থেকে থেকে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। মেঘ সরে গিয়ে আকাশ একটু পরিষ্কার হল। মনে মনে প্রার্থনা করছি, হে ঠাকুর আজকের দিনটা এমনি ভাবেই কাটিয়ে দাও। হঠাৎ ছোট্টু আঙুল দেখিয়ে ডান দিকের পাহাড়ের দিকে তাকাতে বলল। আরে! সত্যি তো, দূরে পাহাড়ের ঢাল জুড়ে ফুটে রয়েছে সাদা রঙের অজস্র ফুল। ব্রহ্মকমল? ছোট্টু বলল, ঠিক তাই। ও আস্বস্ত করে বলল, উপরে আরও ফুল দেখতে পাওয়া যাবে। আমি বিস্মিত, রোমাঞ্চিত।

চলতে চলতে আমাদের পথের অভিমুখ বাঁ দিকে অনেকটা ঘুরে গেল। এখন দূরে দেখা যাচ্ছে গুরুদ্বারার শীর্ষের খানিক অংশ। আরও কিছুটা যাওয়ার পর আমাদের নামতে হল ঘোড়া থেকে। বাকি পথটুকু যেতে হবে পায়ে হেঁটে। খানিকক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম হেমকুণ্ড সাহিব গুরুদ্বারার প্রাঙ্গনে। সেই প্রাঙ্গন থেকে চারপাশের দৃশ্য চাক্ষুষ করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। গুরুদুয়ারার অবস্থান ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায়।

 

গুরুদ্বারায় কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে গেলাম পিছনের সরোবরে। মেঘের চাদর সরিয়ে তখন সরোবরের স্বচ্ছ জলে পাহাড়ের সবুজ আভা। বাঁধানো সরোবরের চারপাশে টবে রাখা সতেজ ব্রহ্মকমল। এই প্রথম কাছ থেকে দেখলাম স্বর্গীয় ফুলটি। তবে টবের ফুলে মন ভরলো না। সরোবরের এক পাশে রয়েছে শ্রী লক্ষণ মন্দির। দর্শন করে এলাম।

ফেরার পথে গুরুদ্বারার লঙ্গরে এক কাপ চা খেয়ে বেরলাম ব্রহ্মকমলের সন্ধানে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সামনের পাহাড়ের উল্টো দিকের ঢালে নাকি ফুটে রয়েছে অজস্র ব্রহ্মকমল। শোনা মাত্রই অচেনা পথে চড়াই ভেঙে উঠতে থাকলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখা পেলাম তাদের। যত দূর চোখ যায় শুধু ব্রহ্মকমল। ধর্মীয় বিশ্বাস, ভগবান ব্রহ্মা এবং মহাদেবের প্রিয় ফুল এই ব্রহ্মকমল। দু’চোখ ভরে দেখছি সেই ফুল। ভাবতে অবাক লাগছিল, আমি ব্রহ্মকমলের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে! এত দিনে মনের একটা ইচ্ছে আজ পূর্ণ হল।

ফিরলাম ঘাঙ্গারিয়ায়। ওখানে রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে ঘোড়ায় চড়ে (ঐ দিন খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার সার্ভিস বন্ধ ছিল) পৌঁছে গেলাম পুলনা। ওখান থেকে গাড়িতে আবার আউলি। রাতটা আউলিতে থাকা হল। পরের দিন হরিদ্বারে থেকে হাওড়া ফেরার ট্রেন।

সর্বনিম্ন ফটো সৌজন্যঃ ওয়াই এফ ডেকর।
অন্য সবক’টি ফটো তুলেছেন লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *