শিয়ালদা স্টেশন থেকে রাত ১১টা ২০ মিনিটে ১২৩৭৭ পদাতিক এক্সপ্রেস ছাড়ল। আজ ১০ অক্টোবর, ২০২৪। পরের দিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ ট্রেন পৌঁছালো তার শেষ গন্তব্য নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে। আলিপুরদুয়ারে লাঞ্চ সেরে গাড়িতে ৫৮ কিলোমিটার দূরবর্তী ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁয় পৌঁছোতে বিকেল ৪টে। রাস্তা ভালো। রাস্তার দু’পাশে চা-বাগান, জঙ্গল। আলিপুরদুয়ার সাব-ডিভিশনের শহর জয়গাঁ। মাঝে ভুটান গেট। এপারে জয়গাঁ। অন্যদিকে ভুটানের ফুন্টশোলিং শহর। রাত্রিবাসের ব্যবস্থা ছিল জয়গাঁর হোটেল কস্তুরীতে।
পরের দিন, ১৩ অক্টোবর, জয়গাঁয় ব্রেকফাস্ট সেরে ফুন্টশোলিংয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়া গেল। ভুটানে প্রবেশের জন্য ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ভোটার পরিচয়পত্র দেখাতে হল। ভারতীয় নাগরিত্বের প্রমাণ হসেবে পাসপোর্টও পেশ করা যেতে পারে। আধার কার্ড গ্রাহ্য হয় না। ভুটান ভ্রমণের সময়সীমা জানিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কাজটা করে রেখেছিল আমাদের জন্য নির্দিষ্ট গাইড। গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। ফুন্টশেলিং থেকে ভুটানের নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ি ব্যবহৃত হবে ভুটান ভ্রমণে।
ভুটান ভ্রমণের জন্য সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি বাবাদ টুরিস্টপিছু দিনপ্রতি ১,২০০ টাকা ও গাইড-সহ গাড়িপিছু দিনপ্রতি ১,৫০০ টাকা জমা দিতে হয়। ফুন্টশেলিংয়ের এইসব কাজ মিটিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ ভুটানের রাজধানী থিম্পুর উদ্দেশে রওনা হওয়া গেল। ফুন্টশেলিং থেকে থিম্পুর দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। পথে চুখা ড্যাম, ওয়াংখা জলপ্রপাত দেখা হল। রাস্তায় এক রেস্তোরাঁয় দ্বিপ্রাহরিক আহার সারা হয়েছিল। রাস্তা চোখে পড়ার মতো পরিচ্ছন্ন। রাস্তায় আবর্জনা ফেললে জরিমানা হয়। আঞ্চলিক মানুষ পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। বিকেল ৫টায় থিম্পু পৌঁছালাম। উঠলাম পূর্বনির্দিষ্ট একটি হোটেলে। থিম্পু শহরের গড় উচ্চতা ৯,০০০ ফুট।
১৪ অক্টোবর সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম পুনাখার উদ্দেশে। প্রথমে থিম্পু থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের দোচু-লা’য় গাড়ি থামল।। দোচু-লা একটি পাস। জায়গাটার উচ্চতা ১০,১৩০ ফুট। চারপাশের দৃশ্যপট অতীব সুন্দর। এখানকার ১০৮টি চোর্তেন বা বৌদ্ধ স্তূপের সমাহার দেখলাম। রং-বেরংয়ের প্রার্থনা পতাকায় উজ্জ্বল চোর্তেন এলাকা। দোচু-লা থেকে বাঁ-দিক থেকে ডানদিকে দেখা যায় এই পুর্বতশৃঙ্গগুলিঃ মাসাগং (৭১৫৮ মিটার), সেন্ডাগং (৬,৯৬০ মিটার), তেরিগং (৭,১২৪ মিটার), ফু গং (৭,১৫৮ মিটার), কংফু গং (৭,১৭০ মিটার), জংফু গং (৭,০৬০ মিটার)। পরপর এই শৃঙ্গগুলি সমবেত ভাবে অপরূপ দৃশ্যপট রচনা করেছে।
এরপর গিয়েছিলাম পুনাখা জং। পো-চু ও মো-চু নদীর সঙ্গমস্থলে বিশাল এলাকা নিয়ে দুর্গ-সদৃশ কমপ্লেক্স, সঙ্গে মনাস্ট্রি। তৈরি হয়েছিল ১৬৩৭-‘৩৮ সালে। জং সাধারণত তৈরি হত প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে। পুনাখা জং পরবর্তীকালে ভুটানের প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ১৯৫৫ সালে ভুটান সরকারের প্রশাসনিক সদরদপ্তর পুনাখা জং থেকে স্থানান্তরিত হয় থিম্পুতে। পুনাখাতে পো-চু নদীর উপর সাসপেশন ব্রিজ দেখে থিম্পুর হোটেলে ফিরলাম। তখন রাত ৮টা।
কাল থিম্পুতে সাইটসিয়িং। সে-কথা পরের পর্বে।
ফটো (উপর থেকে)
১। ১০৮ চোর্তেন।
২। ফুন্টশোলিং শহর।
৩। দোচু-লা।
৪। পুনাখা জং।
৫। পো-চু ও মো-চু নদীর সঙ্গমস্থল।
ফটোঃ লেখক।
2 Comments
[…] https://torsa.in/bhutan-tour-part-one/ […]
[…] https://torsa.in/bhutan-tour-part-one/ […]