Follow us
Search
Close this search box.

শীত আসছে, আউলি তুষারশুভ্র হয়ে উঠবে

শীত আসছে, আউলি তুষারশুভ্র হয়ে উঠবে

বরফে বরফে ছয়লাপ চারিদিক। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আউলি প্রকৃতই তুষারশুভ্র। তাপমাত্রা মাইনাসের ঘরে নেমে আসে অনেক সময়েই। বরফাচ্ছাদিত আউলি ভ্রমণ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।

উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ৯২০০ ফুট উচ্চতায় আউলির অবস্থান। ওক, দেওদারের ঘন জঙ্গল আর আপেলের বাগান আউলির রং বদল করে দেয় গ্রীষ্মে। শীতে সবই বরফ-সফেদ। তবে পর্যটকদের কাছে শীতের আউলির আকর্ষণই বেশি। বলা ভালো, সে এক দুর্নিবার আকর্ষণ। তখন স্কিয়িংয়ের আসর বসে আউলির পাহাড় ঢালে। আয়োজিত হয় স্কিয়িংয়ের প্রতিযোগিতা। দেশ-বিদেশের পর্যটকে শীতের আউলি গমগম করে। একটি কৃত্রিম লেক রয়েছে আউলিতে। তা ওই স্কিয়িংয়ের স্বার্থেই, কম ঠান্ডায় বরফ জমানোর জন্য।

আউলির আরেকটি বিশেষত্ব তার ভৌগোলিক অবস্থান। নন্দাদেবী, মানা পর্বত, কামেটের মতো মহিমামণ্ডিত সব পর্বতচূড়া দেখা যায় আউলি থেকে।

শীতে বদ্রীনাথ জমাট বরফের কারণে অগম্য হয়ে ওঠে। এ সময় বদ্রীবিশাল পূজিত হন যোশীমঠের বাসুদেব মন্দিরে। আউলি যেতে হয় এই যোশীমঠ হয়েই। যোশীমঠের ৫৮ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা উপরে আরেকটি রাস্তা ধরে আউলি যেতে হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে এ পথে গাড়ি চলে। শীতে জমে থাকা বরফের কারণে পথটি প্রায় অগম্য হয়ে পড়ে। রাস্তা খানিকটা পরিষ্কার থাকলে ট্যাক্সি চলে। যোশীমঠ থেকেই ট্যাক্সি পাওয়া যায়। দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার।

শীতে আউলি যাত্রার আকর্ষণীয় পথ রোপওয়ে। যোশীমঠ থেকে আউলি পর্যন্ত ৪.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রোপওয়েটি এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ রোপওয়ে। যোশীমঠ থেকে আউলি পৌঁছাতে ২৫ মিনিট সময় লাগে। সর্বোচ্চ ৯৯০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে চলবে কেবলকার। একসঙ্গে ২৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম ঝুলন্ত যান।

কেবলকারে চড়ে একেকটা পাহাড়-ঢাল পেরিয়ে যাওয়া, স্থিরচিত্রের মতো দূরের সব পাহাড়ি গ্রাম, বরফের ঢাল বেয়ে স্কিয়ারদের দ্রুতগতিতে নেমে যাওয়া, দূরে মহামহিম সব পর্বতশীর্ষ, সবমিলিয়ে সে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। রোপওয়ে ব্যবস্থার আঞ্চলিক নাম গন্ডোলা। আরেকটি রোপওয়ে ব্যবস্থা আছে আউলিতে। চেয়ারলিফট। এই ব্যবস্থায় চারজন যাত্রী পাশাপাশি বসতে পারেন। চারিদিক খোলা। রেলিংয়ের ঘেরাটোপ যাত্রীদের সুরক্ষিত রাখে। চেয়ারলিফটে করে স্কিয়িংয়ের ঢালগুলোতে পৌঁছানো যায়। কৃত্রিম লেকটিও ভালো দেখা যায় চেয়ারলিফট থেকে। চেয়ারলিফটে জনপ্রতি একপিঠের ভাড়া ৫০০ টাকা। বড় গন্ডোলায় জনপ্রতি যাতায়াতের ভাড়া (উভয় পিঠের) ১,০০০ টাকা। শিশুরা ভাড়ায় ছাড় পায়। বেড়াতে গেলে সাম্প্রতিক ভাড়া জেনে যাওয়াই ভালো।

অন্তত তিন দিনের থাকা, খাওয়া ও স্কিইং নিয়ে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের (জি এম ভি এন) প্যাকেজ রয়েছে। তথ্যের জন্য দেখতে পারেন এই ওয়েবসাইটটিঃ https://gmvnonline.com/skiing বিভিন্ন এজেন্সি থেকে স্কিয়িংয়ের ব্যাবস্থা হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের একদিনের সরঞ্জাম-সহ স্কিয়িংয়ের জনপ্রতি খরচ ১,৫০০-২,০০০ টাকা। একাধিক দিনের স্কিয়িং প্রোগ্রাম বুক করা যেতে পরে।

গ্রীষ্মের আউলি।

গড়সন পয়েন্ট ট্রেকিং :

শীতের আউলির রূপ আরো খুলে যাবে যদি আউলি থেকে গড়সন পর্যন্ত বরফে পা ডুবিয়ে হাঁটা যায়। ছোট ট্রেক-পথ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আউলি-গড়সন ট্রেকিং শুরু হয় ৮ নম্বর টাওয়ারের কাছ থেকে। একজন গাইড নিতে হবে। বরফে মোড়া ওক গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সে পথের সৌন্দর্য সারা জীবনে ভোলবার নয়। পথের মাঝামাঝি পড়বে চাকচিক্যবিহীন, পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটি মন্দির। স্থানীয়রা এই মন্দিরে পুজো দেন। গড়সন পয়েন্টের উচ্চতা ১১,৮৮০ ফুট। অর্থাৎ পায়ে পায়ে অনেকটা উঁচুতে উঠে আসতে হবে। কমবেশি আড়াই ঘন্টায় আউলি থেকে গড়সন পৌঁছানো যায়। গড়সন পয়েন্ট থেকে পরিষ্কার দেখা যায় নন্দাদেবী, মানা পর্বত, দুনাগিরির শৃঙ্গগুলি।

যাওয়ার পথ

প্রথমে পৌঁছাতে হবে হরিদ্বার। হাওড়া থেকে উপাসনা এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস ,দুন এক্সপ্রেস পাওয়া যাবে। হরিদ্বার থেকে চলে আসুন হৃষিকেশ। দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। বাস, অটো পাবেন হরিদ্বার থেকে হৃষিকেশ যাওয়ার জন্য। হৃষিকেশের যাত্রা বাস টার্মিনাস থেকে যোশীমঠ যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। হৃষিকেশ-যোশীমঠ দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। হৃষিকেশ থেকে শেয়ার ট্যাক্সির ব্যবস্থাও আছে। মাথাপিছু ভাড়া নেওয়া হয়।

থাকার ব্যবস্থা
থাকতে পারেন আউলিতে। থাকা যায় যোশীমঠেও। আউলিতে হোটেল ভাড়া বেশি। যোশীমঠে থাকার ব্যবস্থা বেশি। খরচও তুলনামূলক কম। তবে আউলিতে থাকার রোমাঞ্চ অবশ্যই বেশি। শীতে আউলিতে থাকা মানে বরফের মাঝে বাস করা।

আউলিতে

নন্দাদেবী ইকো টুরিজম রিসর্ট (সরকারি)-(০১৩৮৯)২২৩২০৮, ৯৫৬৮০০৬৬০২।
স্কি রিসর্ট (সরকারি)-(০১৩৮৯)২২৩২০৮।
জি এম ভি এন স্কি রিসর্ট (সরকারি)- ৯৫৬৮০০৬৬০২।
নন্দাদেবী ইকো হাট (জি এম ভি এন) – ৯৫৬৮০০৬৬২৯।
ক্লিফটপ ক্লাব রিসর্ট- ৯৮১৮২০৬৬২৫।

যোশীমঠে

নরসিংহ টুরিস্ট কমপ্লেক্স (জি এম ভি এন) – (০১৩৮৯)২২২১১৮।
জ্যোতির ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স (জি এম ভি এন) – (০১৩৮৯)২২২২২৬, ৯৫৬৮০০৬৬৬৭।
(জি এম ভি এন) নিউ টি আর এইচ – ৯১১৩৫২৭৪০৮৯৬, ৯১১৩৫২৭৪৬৮১৭।
হোটেল দ্রোনাগিরি – (০১৩৮৯)২২২৬২২,৯৪১০১২৬৬০৯।
ড্রিম মাউন্টেন রিসর্ট – ৮৪৪৯০৬৩৬৫২, ৮৯৫৮২৯৮৫৮৫।
হোটেল তওভ – ৯১০৫০৫৫৫৮৮।
পঞ্চবটী ইন – ৯০৬৮০১৭১৪১/২।
হোটেল উদয় প্যালেস – (০১৩৮৯)২২২০০৪।

যোশীমঠ ও আউলিতে আরও নানা হোটেল-রিসর্ট রয়েছে।

ফটো সৌজন্যঃ উত্তরাখণ্ড পর্যটন, জি এমভি এন, ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া।

Comments are closed.