দিন সাতেকের সময় হাতে নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ থাকলে ঝাড়খণ্ডের কথা ভাবা যায় অবশ্যই। পাহাড়, জলপ্রপাত, উপত্যকা, ড্যাম, লেক, অরণ্য, ধর্মীয় স্থান ইত্যাদি-সহ চমৎকার এক ভ্রমণ হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্যটিতে। কীভাবে বেড়াবেন, কোথায় কোথায় যাবেন, সে-সব তথ্য-সহ ভ্রমণ-পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন তুষার পাত্র।
কী কী দেখবেন
রাঁচি (কাঁকে ড্যাম,টেগোর হিল, রামকৃষ্ণ মিশন), দশম ফলস, হুন্ড্রু ফলস, জোনহা ফলস, দেওড়ি মন্দির, সূর্যমন্দির, জগন্নাথ মন্দির, রাজারাপ্পা, পাত্রাতু ভ্যালি, নেতারহাট, লোধ ফলস এবং বেতলা ফরেস্ট।
কীভাবে বেড়াবেন
প্রথম দিনঃ হাওড়ার নতুন প্লাটফর্ম থেকে রাতের ক্রীড়াযোগ এক্সপ্রেসে রাঁচির উদ্দেশে যাত্রা করা যাক ।
দ্বিতীয় দিনঃ সকাল সকাল পৌঁছাবেন রাঁচি। স্টেশন রোডেই পাবেন প্রচুর হোটেল। আগেভাগেও হোটেল বুক করে নিতে পারেন। হোটেলের মাধ্যমে গাড়ি নিন। প্রথম দিন ঘুরে দেখুন দেওড়ি মন্দির, দশম ফলস,সূর্যমন্দির, কাঁকে ড্যাম, রামকৃষ্ণ মিশন ও টেগোর হিল।
তৃতীয় দিনঃ আজ আমরা দেখব পাত্রাতু ভ্যালি, জোনহা ফলস, হুড্রু ফলস এবং রাজারাপ্পা। এইভাবেই বেড়াতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে দিক পরিবর্তন করবেন।
ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলার দারুণ সুন্দর এক উপত্যকা পাত্রাতু। রাঁচি থেকে পাত্রাতু ভ্যালির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। যাওয়ার পথটিও খুব সুন্দর। নলকরী নদীর ওপর তৈরি পাত্রাতু বাঁধ ও বিশাল জলাধার পাত্রাতু উপত্যকার বিশেষ আকর্ষণ। বর্ষায় পাত্রাতু উপত্যকার নয়নাভিরাম শোভায় আপনাকে মজতেই হবে। জল-জঙ্গল জুড়ে বৃষ্টি নামে। সমগ্র পাত্রাতু উপত্যকা জুড়ে তখন মন কেমন করা মেঘলা রং। অরণ্য ঘন সবুজ। ইতিউতি পাখির ডাক।
ভৈরবী নদী দামোদর নদের সঙ্গমস্থলে রাজারাপ্পার ছিন্নমস্তা মন্দিরের অবস্থান। মন্দিরের স্থাপত্যে অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরের আদল লক্ষ্য করা যায়। বছরভরই ছিন্নমস্তা মন্দিরে ভক্তদের সমাগম লেগেই থাকে। মন্দির ছাড়াও আঞ্চলিক প্রাকৃতিক পরিবেশটিও সুন্দর। দুই নদীর সঙ্গম-লাগোয়া এলাকায় শীতের মরশুমে চড়ুইভাতির আসর বসে।
চতুর্থ দিনঃ আজ সকালে আমরা রওনা দেব নেতারহাটের পথে। রাঁচি থেকে দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার। সময় লাগবে চার ঘন্টা। নেতারহাটের অরণ্য, জলপ্রপাত এবং এখান থেকে দেখা সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত আপনার বহুকাল মনে থাকবে। নেতারহাট সানসেট পয়েন্টে যাওয়ার পথ-সংলগ্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক শোভা সহজে ভোলবার নয়। কোথাও কোথাও পাইনের জঙ্গল চোখে পড়বে এ পথে।
নেতারহাটে থাকার সেরা ঠিকানা ঝাড়খণ্ড টুরিজমের হোটেল প্রভাত বিহার। আগেই অনলাইনে ঘর বুক করে নেবেন। বিকেলে নেতারহাট লেক, ন্যাসপাতি বাগান, পাইনের বন আর নেতারহাট আবাসিক স্কুল দেখে চলে যান ম্যাগনোলিয়া পয়েন্টে,সূর্যাস্ত দেখার জন্য। সানসেট পয়েন্ট থেকে দিকবিদিক রাঙিয়ে সূর্যাস্তের সে-দৃশ্যও আপনার মনে থাকবে বহুদিন। বর্ষায় বা বর্ষার ঠিক পরে পরেই নেতারহাট গেলে অবশ্যই ঘাঘরি জলপ্রপাতটি দেখে নেবেন। এ সময় সে উদ্দাম।
পঞ্চম দিনঃ এদিন ভোরে হোটেল প্রভাত বিহারের ছাদ থেকে সূর্যোদয় দেখুন। সূর্যোদয়ের কালে নেতারহাটের আকাশ যেন এক বহুরঙা ক্যানভাস হয়ে ওঠে। সে-দৃশ্য স্বপ্নসম। তারপর নেতারহাট থেকে বেরিয়ে পড়ুন বেতলার উদ্দেশে। পথে দেখবেন লোধ ফলস। বেতলায় থাকার সেরা জায়গা ঝাড়খণ্ড টুরিজমের হোটেল বন বিহার। এ ছাড়াও আছে পালামৌ টাইগার রিজার্ভের বিশ্রামাগার ও গাছবাড়ি। বুকিং করতে পারবেন অনলাইনেই।
ষষ্ঠ দিনঃ এ দিন সকালে বেতলার জঙ্গলে সাফারি। জিপ সাফারি হয় সকালে-বিকেলে। হাতি সাফারি হয় শুধু সকালে। সাফারি শেষে বেড়িয়ে আসুন দুই কিলোমিটার দূরের বেতলা ফোর্ট থেকে। বিকেলটা বরাদ্দ থাকবে কেচকি নদীর সঙ্গম দেখার জন্য। নদীতে নামার আগে অবশ্যই দেখবেন বাঁ-দিকের বনবাংলোটা। সত্যজিৎ রায় অরণ্যের দিনরাত্রির শুটিং করেছিলেন এখানে।
সপ্তম দিনঃ এ দিন সকালে বেতলা পার্কের সামনে বসে খানিকটা সময় কাটাতে পারেন। তাড়াতাড়ি দুপুরের লাঞ্চ সেরে ২২ কিলোমিটার দূরের ডালটনগঞ্জ থেকে দুপুরে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ধরুন।
অষ্টম দিনঃ ভোরে হাওড়া। হাতে আরও সময় থাকলে বলব,রাঁচিতে আরেকটা দিন কাটান।
কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের নম্বর:
ঝাড়খণ্ড টুরিজমের হোটেল প্রভাত বিহার, নেতারহাটঃ ৯১০২৪-০৩৮৮৩। সুইস কটেজ, নেতারহাটঃ ৯৭২৩৮-২২২০৮। হোটেল বন বিহার, বেতলাঃ ৯১০২৪০৩৮৮২।
রাঁচির কয়েকটি হোটেল
হোটেল অমৃত ৯৪৩১১০৫৮৮৪। হোটেল এ ভি এন প্লাজা ৯৭৭১৪৮০৩৮৪। হোটেল প্রতাপ গ্র্যান্ড ৯০৬০৩২২০০১। হোটেল সৎকার ০৬৫১-২৪৬-০৮৪৪। হোটেল বীনা ইন ৭৬৩১৭০০০৭৬। হোটেল দি এলিমেন্টস ৯৫৭০৭৭৭৭০৩, ৯২০৪৭৮৪৬৮৮। হোটেল ব্লিস রিজেন্সি ০৬৫১-২৪৬-০৪৭৩। রাঁচির স্টেশন রোডে আরও অনেক হোটেল পাওয়া যাবে।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, রাঁচিঃ যোগাযোগের নম্বরঃ০৬৫১-২৫৫-২৪২৭।
রাঁচির টুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টারের ঠিকানাঃ টুরিস্ট কমপ্লেক্স, ৫,মহাত্মা গান্ধি মার্গ, রাঁচি-৮৩৪০০১। ফোনঃ ৯১০২৪০৩৮৮৪। কলকাতায় ঝাড়খণ্ড টুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টারের ঠিকানাঃ ১২/এ, ক্যামাক স্ট্রিট, ঊষাকিরণ বিল্ডিং, নবম তল, ফ্ল্যাট নম্বর ৮বি, কলকাতা-১৭। ফোনঃ ০৩৩-২২৮২-০৬০১, ৮৬৯৭০৯৪৭৯০।
পড়তে পারেন
‘কেচকি কোয়েল অরণ্যের দিনরাত্রি’