গাড়ি চলতে থাকবে উৎরাই পথে। পেরবেন হিমা জলপ্রপাত। পথে পড়বে চোখ জুড়ানো চা বাগান। আর পথের কয়েকটি জায়গা থেকে উপরের দিকে দার্জিলিং শহরটিকে দেখা যাবে নতুন চোখে। অপূর্ব সুন্দর সেই পথ ধরে পৌঁছাবেন পাহাড়ে ঘেরা এক উপত্যকায়। বিজনবাড়ির আঙিনায়। উচ্চতা ২,৫০০ ফুট। ঘুম স্টেশন রোড় থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরের বিজনবাড়ি দার্জিলিংয়ের ভ্রমণ মানচিত্রে দ্রুত বিশিষ্ট জায়গা করে নিচ্ছে।
বিজনবাড়ির এক প্রান্ত দিয়ে বইছে ছোটা রঙ্গীত নদী। এ কারণে বিজনবাড়ির উপত্যকাটি সুফলা। নদী-সন্নিহিত এলাকায় রয়েছে কমলালেবু্, আনারসের বাগিচা। ফল ছাড়াও নানা সবজি ও শস্যের চাষ হয় বিজনবাড়ির উর্বর জমিতে। বিজনবাড়ির লোধমা এলাকায় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। বিজনবাড়ির পুলবাজার বা পালবাজার এলাকায় রয়েছে সুন্দর একটি মন্দির। পাথর খোদাই করে দুর্গা, শিব, গণেশের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।
বিজনবাড়ি ঘুরে দেখতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। দেখবেন দার্জিলিংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ি মানুষের জীবনযাপন। উপত্যকার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। নদীর পারে গিয়ে বসুন। চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। হাইকিং, ট্রেকিংয়ে আগ্রহ থাকলে বিজনবাড়ি দারুণ এক স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র। বিজনবাড়ি থেকে রেলিং (৮ কিলোমিটার) হাইকিং হতে পারে। হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সোম টি এস্টেট, ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। চলে যেতে পারেন কলবংয়ে। এখান থেকে সিকিমের কিছু অঞ্চল দেখা যায়। দিনে দিনে দার্জিলিং শহর বেড়িয়ে ফিরে আসুন বিজনবাড়ি। আর সবুজ, নিষ্কলুষ প্রকৃতির মধ্যে বিশ্রাম।
এ ভ্রমণে বিজনবাড়ির সঙ্গে লামাগাঁওকে যুক্ত করে নেওয়া গেলে তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। বিজনবাড়ি থেকে লামাগাঁও ১২ কিলোমিটার। ছবির মতো পাকদণ্ডী পথ। ৫,২০০ ফুট উচ্চতার লামাগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য এককথায় অসাধারণ।
শীতে লামাগাঁওয়ের গভীর খাদ ঘন কুয়াশায় ভরে থাকে। জানলা, দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে আসে সেই কুয়াশা। গ্রীষ্মের লামাগাঁও খুব আরামদায়ক। পাহাড়ের ঢালে জৈব চাষ হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লামাগাঁওয়ের ঘন সবুজের সঙ্গে কমলা রঙের মিশেল ঘটে। কমলালেবুর ফলনে লামাগাঁও তখন বড় বর্ণময়।
পরিষ্কার দিনে লামাগাঁওয়ের পাহাড় থেকে দার্জিলিংয়ের বিস্তৃত চা বাগান দেখা যায়। দেখা যায় দার্জিলিং শহরটিকেও। রাতের দার্জিলিংয়ের আলোর মালা এক রোমান্টিক দৃশ্য এঁকে দেয়। আর মাথার উপরে থাকবে তারকাখচিত আকাশ। সকালে লামাগাঁওয়ের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। পাখির ডাকে চমৎকৃত হবেন। পাহাড়ি ফুলের রঙের বাহার মন ভালো করে দেবে। চোখে পড়তে পারে অর্কিডগুচ্ছ।
যাওয়ার পথ
এন জে পি থেকে বিজনবাড়ি ৯০ কিলোমিটার। সকালে দার্জিলিংয়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার বাস ছাড়ে। দার্জিলিংয়ের চক বাজার এলাকা থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাবেন। ঘুম থেকেও বিজনবাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
এন জে পি থেকে লামাগাঁও ১০২ কিলোমিটার। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি লামাগাঁও পৌঁছে যাওয়া যায়। অন্যথায় এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত এসে সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে লামাগাঁও চলে আসা যাবে। দার্জিলিং থেকে লামাগাঁও ৩০ কিলোমিটার, ঘুম থেকে ৪০ কিলোমিটার। বিজনবাড়ি থেকে লামাগাঁও ১২ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
বিজনবাড়িতেঃ বিজ্জু ভ্যালি ভিলেজ রিট্রিট, ফোনঃ ৯৭৩৫৫-৮৫৫৫৫। মেগিটার হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২১-৭৮১১৩, ৯৩৮২২-০৫৬৭২। রেলিং রঙ্গীত রিসর্ট, ফোনঃ ৯৮০০৩-১৫৩৪০। বাঁশবাড়ি ফার্মস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২২-৪০৫৩৭।
লামাগাঁওয়েঃ লামাগাঁও হোমস্টে। এটি লামাগাঁওয়ের পুরনো হোমস্টে। হোমস্টের জমিতে বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করা হয়। ট্রেকিং, ফিশিং, সাইটসিয়িংয়ের ব্যাপারে হোমস্টে থেকে সহায়তা করা হয়। ফোনঃ ৭০৪৭০-৯৮৬৯৫।