পর্যটক সমাগমের বিচারে ১০ বছরের রেকর্ড ভাঙলো কাশ্মীর। ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত উপত্যকার হোটেল, হাউসবোট মিলিয়ে ৭ লক্ষের বেশি বুকিং হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর টুরিজম বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় পর্যটন বিভাগ সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
কাশ্মীরী ভাষায় ‘চিলাই কালান’ মানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। সেই চিলাই কালান চলে গোটা জানুয়ারি মাস ধরে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত চিলাই কালানের সময়কাল। এ সময়ে গোটা উপত্যকা জুড়ে তুষারপাত হয়। ২০২২-এ কোভিডের ঢেউ খানিক স্তিমিত হতে ওই জানুয়ারি মাস থেকেই কাশ্মীরে দলে দলে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছিল। সেই স্রোত ক্রমশ বেড়েছে। আর মে মাসে তো যকে বলে পর্যটকের ঢল নেমেছে উপত্যকায়।
জুন পর্যন্ত হোটেল, হাউসবোটে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। ইতিমধ্যে হোটেল এবং বেড়ানোর জন্য গাড়ির ভাড়া বেড়েছে। অনেকে হোটেল বুক না করে গিয়ে পড়ায় আশ্রয়ের খোঁজে নাকাল হয়েছেন।
২০২১-এর জানুয়ারি থেকে মধ্য-মে পর্যন্ত ১,২৫,০০০ পর্যটক উপত্যকায় বেড়াতে এসেছিলেন। কোভিড অতিমারীর ভ্রুকুটি ছিল তখন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে কাশ্মীরে পা রেখেছেন প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ। মে আর জুন মিলিয়ে সংখ্যাটা ৭,০০,০০০ ছাড়িয়ে যাবে। গত ১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম এত ভ্রমণার্থীর আগমন ঘটল কাশ্মীরে।
উপত্যকার অভিজ্ঞ পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, জুন পর্যন্ত চিত্রটা প্রায় একইরকম থাকবে। হোটেল, হাউসবোটে জায়গা নেই বললেই চলে। নতুন করে বুকিং পাওয়া প্রায় অসম্ভব। পেলেও বেশি টাকা গুনতে হবে। পরিবহণের খরচও বেশি পড়বে। ফলে আগে থেকে হোটেল বুক করা না থাকলে জুন পর্যন্ত কাশ্মীর ভ্রমণ স্থগিত রাখাই বিবেচনার কাজ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
বর্ষার কাশ্মীর
বসন্ত শীত গ্রীষ্মে কাশ্মীর সুন্দর। বর্ষাতেই বা নয় কেন? কাশ্মীর বর্ষাতেও সুন্দর, আরেক রূপে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর কাশ্মীরে বর্ষার মরসুম। উপত্যকায় বেড়ানোর ক্ষেত্রে এই বর্ষার মরসুমকে ‘অফ সিজন’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময়ে হোটেল, বেড়ানোর জন্য গাড়ির ভাড়া তলনামূলক ভাবে নিম্নমুখী থাকে। অন্তত এতদিন পর্যন্ত এরকমটাই হয়ে এসেছে।
কাশ্মীর উপত্যকা ভিন্ন সৌন্দর্যে ফুটে ওঠে এই বর্ষার মরসুমে। সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয় কাশ্মীর উপত্যকায়।
জুলাই-অগস্ট মাসে ডাল, মানসবল লেকে পদ্মফুলের মেলা। নাগীন লেক, উলার লেকে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা। ঝিলম, লিডার, নীলম, সিন্ধু উচ্ছ্বসিত। বৃষ্টিস্নাত আশ্চর্য সব তৃণভূমি। বার্চ ফার উইলো পপলারের অরণ্য সে কী অবাক করা সবুজ। কোকেরনাগ, অহরবল, নুরি চ্যাম্ব, সিয়ারবাবা টেম্পল জলপ্রপাতগুলি প্রাণচঞ্চল। গুলমার্গে কত বুনো ফুল। দুধপথ্রীর বিস্তৃত তৃণভূমিতে মেঘের ছায়া ঘনায়।
অগস্ট-সেপ্টেম্বরে আপেলের বাগানগুলিতে ব্যস্ততা। আপেলের ফলন ঘরে তোলার সময় যে তখন। আপেলের গা বেয়ে টুপটুপ জল ঝরে।
বর্ষার কাশ্মীর সুন্দর। অন্য রূপে।
হেডার ফটো সৌজন্যঃ গ্রেটার কাশ্মীর।