বর্ষায় ভাল্কিমাচানের জঙ্গলে নানা ধারার বৃষ্টি আশ্চর্য সব সঙ্গীত। টাপুর টুপুর বৃষ্টি, রিমঝিম বৃষ্টি, ঝেঁপে নামা বৃষ্টি। শহরে শোনা হয় না বৃষ্টির সেইসব ধ্বনি। বর্ষায় জঙ্গলের গভীরে না ঢোকাই ভালো। তাতে কী। আকাশভরা মেঘ। জঙ্গলে, জলে, ধূ ধূ খেত জুড়ে সেই মেঘলা আকাশের ছায়া। বৃষ্টি। গ্রামের পুকুরে ফুটে থাকা শাপলা ফুল। সবুজ ধানখেত। বিকেলে মেঘ একটু কাটলে সোনালী আলোতে ছাওয়া এদিক ওদিক।
বর্ধমানের আউশগ্রাম. ট্রেনে মানকড় বা গুসকরা স্টেশনে নেমে রিক্সাযোগে খানিকটা গেলেই পৌঁছে যাবেন ভাল্কিমাচানের গভীর জঙ্গলের কিনারে।
শাল-পলাশের জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ৮০ ফুট করে উঁচু ৪টি পুরোনো স্তম্ভ, ওগুলো মাচান নামে পরিচিত। কাছে ছোট একটি জলাশয়। মনে করা হয়, এই জলাশয়ে জল খেতে আসা জানোয়ার শিকার করার জন্য অতীতে মাচানগুলি তৈরি করা হয়েছিল। একসময় প্রচুর ভাল্লুক ছিল এই জঙ্গলে। দলমা থেকে নিজেদের বনপথ ধরে নেমে আসত হাতির পাল। এখন প্রচুর বনবিড়াল, শিয়াল, বাঁদর আছে এই জঙ্গলে। আর আছে নানা প্রজাতির পাখি, প্রচুর প্রজাপতি। ভালকিমাচানে যাওয়ার পথটিও ছবির মতো। ফসলে ভরা খেতের বাহার দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
ভাল্কিমাচানের জঙ্গল থেকে খানিক দূরে যমুনাদিঘি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস বিভাগের যমুনাদিঘি মৎস প্রকল্প। প্রকল্প এলাকার মধ্যে রয়েছে গাছগাছালিতে ঘেরা বড় বড় জলাশয়। মাছের চাষ হয়। বর্ষায় বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সে এক অপূর্ব জলছবি। প্রকল্প এলাকার মধ্যে রয়েছে মৎস বিভাগের গেস্টহাউস কমপ্লেক্স। সুন্দর থাকার ব্যবস্থা।
একটি জলাশয়ের ওপরে রয়েছে ফ্লোটেল। সেখানে চা,কফি বা ঠান্ডা পানীয় নিয়ে নিরালায় সময় কাটানো যায়। ঘুরে বেড়ানো যায় জলাশয়ের ধারে ধারে। সকালে জলাশয়ে মাছধরা দেখা যায়। খালপথে বোটিং করা যায়। চাইলে মাছ ধরা যায়। কমপ্লেক্সের মধ্যেই রয়েছে চিলড্রেনস পার্ক, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। আহারে পাবেন সদ্য ধরা মাছের টাটকা পদ। চাঁদনী রাতে জল-জঙ্গল মিলিয়ে এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়। এখানে থাকলে সকালে বা বিকেলে ভালকিমাচান জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে আসবেন।
উল্টোটাও হতে পারে। ভাল্কিমাচানে থাকলে, সেখান থেকে যমুনাদিঘি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
যাওয়ার পথ
ট্রেনে গেলে নামতে হবে বর্ধমানের মানকড় বা গুসকরা স্টেশনে। হাওড়া থেকে নিয়মিত ট্রেন পাওয়া যায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সড়কপথে কলকাতা থেকে ভাল্কিমাচানের দূরত্ব ১৫৫ কিলোমিটার। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে , পরাজ রেলস্টেশন, অভিরামপুর হয়ে গুসকরা। কলকাতা থেকে সড়কপথে ভালকিমাচান পৌঁছাতে সময় লাগবে ঘন্টা তিনেক। মানকড় ও গুসকরা, উভয় স্টেশন থেকেই যমুনাদিঘি বা ভালকিমাচান যাওয়ার জন্য রিক্সা পাবেন। গেস্টহাউস, হোটেলে বলে রাখলে সেখান থেকেও গাড়িতে স্টেশন থেকে নিয়ে যাওয়া ও স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
থাকার ব্যবস্থা
আম্রপালি গেস্টহাউস কমপ্লেক্স, যমুনাদিঘিঃ এখানে রয়েছে ২১টি এসি ও নন-এসি ঘর। যোগাযোগের নম্বর: ৭৯০৮০৪০৬৯৪, ০৩৩-২৩৩৭-৬৪৬৯।
অরণ্যসুন্দরী,ভাল্কিমাচানঃ যোগাযোগের নম্বর: ৯১৫৩৪২০১৩৩, ০৩৪৫২-২০০৬০৪।