‘লাওস থেকে সড়কপথে ভিয়েতনাম’ শীর্ষক লেখায় ভিয়েতনামের পু-মত ন্যাশনাল পার্ক, জিয়াং নদী, হ্যানয়, হা-লং-বে, হো চি মিন কমপ্লেক্স বেড়ানোর কথা জানিয়েছি। এবার ভিয়েতনামের মেকং ডেল্টা টুর ও কাম্বোডিয়া বেড়ানোর কথা।
আগের দিন রাতে হো চি মিন সিটিতে এসে পৌঁছেছি। আগে এই শহরটির নাম ছিল সায়গন। আজ আমাদের সফরের নবম দিন। তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি (২০২০)। বাতাসে কোভিডের বার্তা রটতে শুরু করেছে। আশঙ্কা দানা বাঁধছে। চিন্তা হয়নি এমনটা নয়, ভ্রমণের মধ্যে রয়েছি, হালকা মেজাজ তখনও।
যাইহোক, আজ আমাদের ভ্রমণ-সূচিতে রয়েছে মেকং ডেল্টা টুর। মেকং নদীর উৎপত্তি স্থল তিব্বতের মালভূমি। চিন, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৪৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই নদী দক্ষিণ চিন সাগরে মিলিত হয়েছে। সমুদ্রে পড়ার আগে অনেকগুলো ধারায় বিভক্ত হয়েছে মেকং নদী। বিশাল অঞ্চল জুড়ে তৈরি হয়েছে মেকং ব-দ্বীপ তথা মেকং ডেল্টা। প্রায় ২৫০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে এই ব-দ্বীপের বিস্তার। ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে এই আঞ্চলটির। প্রচুর পরিমানে ধান উৎপাদিত হয় এই উর্বর ব-দ্বীপ আঞ্চল্টিতে। বিপুল পরিমানে মাছেরও জোগানও পাওয়া যায় এখান থেকে।
মেকং ডেল্টা টুর
সকাল সকাল বেরিয়ে আমরা চলে এলাম মাই থো। মাই থো মেকং ডেল্টা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত একটি শহর। সড়কপথে হো চি মিন সিটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।
হো চি মিন সিটি থেকে মাই থো ৭২ কিলোমিটার। মাই থো থেকে নৌকায় উঠলাম। যাব নানা দ্বীপে। নৌকায় উঠে বসতেই পরিবেশিত হল বড় আকারের একটি করে ডাব। এক ডাবেই উদরপূর্তি। প্রথম যে দ্বীপটিতে নামলাম তার নাম ইউনিকর্ন। মৌমাছি চাষের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপটি। চেখে দেখলাম এখানকার মধু। সত্যিই উৎকৃষ্ট মধু। খাওয়া হল বেনানা বিয়ার। পরে চা-স্ন্যাক্সও পরিবেশিত হল। গলায় পাইথন সাপ জড়িয়ে ফটোও তোলা হল। একটা শোরুম থেকে বাঁশের ফাইবার দিয়ে তৈরি টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনলাম
এরপর আমরা গেলাম কোকোনাট আইল্যান্ড। প্রচুর নারকোল গাছ এখানে। নারকোল থেকে ক্যান্ডি তৈরির পদ্ধতি দেখলাম। খুব জনপ্রিয় এই ক্যান্ডি। এরপর ঘোড়ার গাড়িতে দ্বীপের অন্য একটি জায়গায় গেলাম। স্থানীয়রা নানারকমের ফল ও চা দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করলেন। গানের অনুষ্ঠান হল। অভিনব একটি নৌ-ভ্রমণ হল এরপর। খাঁড়িপথে ছোট নৌকায় চড়ে বেড়ালাম। খাঁড়ির দু-পাশে অজস্র নারকোল গাছ। শয়ে শয়ে গাছ মাথা তুলেছে জলের মধ্যে থেকে। কোথাও কোথাও খাঁড়ির দু-দিক থেকে গাছের মাথাগুলো জড়াজড়্রি করে লম্বা লম্বা সব চাঁদোয়া তৈরি করেছে। জলভেদী এত নারকোল গাছ এই প্রথম দেখলাম। মধ্যাহ্নভোজন সারা হল ড্রাগন আইল্যান্ড নামের আরেকটি দ্বীপে এবং সেইসঙ্গে আমাদের দ্বীপ ভ্রমণ শেষ হল।
এরপর একটি বাসে করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম হো চি মিন সিটির শায়িত বুদ্ধমূর্তি, নোতর দাম ক্যাথিড্রাল, ঐতিহাসিক রিইউনিফিকেশন প্যালেস, সিটি হল বা পিপলস কমিটি বিল্ডিং। ভিয়েতনামের ক্যালেন্ডার অনুসারে আগামীকাল এদেশে পালিত হবে নববর্ষ। উৎসবের পরিবেশের মধ্যে সুন্দর কাটল সারাটা দিন।
কু চি ট্যানেল
পরের দিন, ৫ ফেব্রুয়ারি আমরা কু চি টানেল দেখতে গেলাম। সে এক আশ্চর্য জায়গা। জায়গা না বলে আশ্চর্য ব্যবস্থা বললে মনে হয় মানানসই হবে। হো চি মিন সিটির উত্তর-পশ্চিমে কু চি ডিস্ট্রিক্টে মাটির নীচে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সুড়ঙ্গের এক অবাক করা নেটওয়ার্ক এই কু চি ট্যানেল। আমেরিকা এবং আমেরিকার সহযোগী দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় কমিউনিস্ট গেরিলারা এই সুড়ঙ্গ-জাল তৈরি করেছিলেন।
অফিস, ওয়ার্কশপ, যুদ্ধের সরঞ্জাম সংরক্ষণ ও স্থানান্তরকরণের পথ, রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর, কী নেই মাটির নীচে। রান্না করা হত অনেক রাতে বা ভোর রাতে, যাতে রান্নার ধোঁয়া শত্রুপক্ষের চোখে না পড়ে। সুড়ঙ্গ থেকে রান্নার ধোঁয়া নির্গমণ এবং সুড়ঙ্গে বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা সুচিন্তিত পরিকল্পনার পরিচয় দেয়। গেরিলারা কীভাবে ফাঁদ (বুবি ট্র্যাপ) তৈরি করে শত্রুসেনাদের মারত, কীভাবে শত্রুপক্ষের ফেলা বোমা না ফাটলে সেই বোমাকে আবার কার্যকর করে শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হত, সে-সব সুড়ঙ্গের ওয়ার্কশপে মডেলের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ঘুরলাম অনেকটা। সুড়ঙ্গ-পথ ধরে কাম্বোডিয়াতেও চলে যাওয়া যায়। সত্যি কথা বলতে কী, এই সুড়ঙ্গের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করছিল না।
ওয়ার মিউজিয়াম
এরপর এলাম ভিয়েতনামের বিখ্যাত ওয়ার মিউজিয়ামে। দেখে এসে মনে হয়েছিল, না গেলেই মনে হয় ভালো হত। ভিয়েতনামে আমেরিকার সৈন্যদের বিভৎস অত্যাচারের চিহ্ন ও নমুনাগুলো দেখে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। বোমা ফেলে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, গেরিলাদের ওপর কতভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, যুদ্ধের পরিণামে ভিয়েতনামে কত বিকৃত শিশুর জন্ম হয়েছে, সে-সব মডেল, ছবি, তথ্য ইত্যাদি সহ উপস্থাপিত হয়েছে সংগ্রহশালায়। অল্প বয়সে দেখা সেই ছবিটা আবার দেখলাম এখানে, একটি মেয়ে আগুনে ঝলসে গিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় দৌড়াচ্ছে। ছোটবেলায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই ছবিটি দেখে আঁতকে উঠেছিলাম।
একটা দেশ ফ্রান্স, চিন, আমেরিকার বিরুদ্ধে মরনপণ লড়াই করেছে মুক্তির জন্য। বারবার ধ্বংসের মধ্যে থেকে উঠে এসেছে। সেই হার না মানা মনোভাব দেশটাকে শক্তিশালী করেছে, সংহত করেছে। ‘লাল সেলাম’ ভিয়েতনামের মানুষের অবশ্যই প্রাপ্য। আমেরিকা-বিরোধী লড়াইয়ে সফল নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হো চি মিন এবং ভিয়েতনামের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারত থেকে পাঠানো অনেকগুলো বার্তা-পত্র রাখা আছে মিউজিয়ামে।
আমাদের ভিয়েতনাম ভ্রমণ শেষ হল। মধ্যাহ্নভোজনের পরে দলের চার সদস্য ছাড়া বাকি সকলে বিমানবন্দরে চলে গেলেন। ওঁরা ব্যাঙ্কক হয়ে দেশে ফিরে যাবেন। আমরা যাব কাম্বোডিয়া।
ভিয়েতনাম থেকে কাম্বোডিয়া
ঝকঝকে এবং আরামদায়ক একটি বাসে উঠে বসলাম আমরা। কোচটিতে শুয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। কাম্বোডিয়ার সীমান্তে ভিসা হল। বাসটি আমাদের কাম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের মিটো হোটেলে পৌঁছে দিল। সুন্দর ডিনার সারলাম হোটেলে। কোনও রুম পার্টনার নেই আজ। বিরাট ঘরে আমি একা।
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি। বেশ বেড়াচ্ছি চারজনে। এদিন সকালে গেলাম নমপেনের রয়্যাল প্যালেসে। প্রাসাদে নীল পতাকা উড়ছে। এর অর্থ রাজা এখন প্রাসাদেই রয়েছেন। বর্তমান রাজার কোনও সন্তান নেই। প্রাসাদটির স্থাপত্যশৈলী খুবই সুন্দর। প্রাসাদের নানা অংশ দেখলাম ঘুরে ঘুরে। রয়্যাল প্যালেস চত্বরের দক্ষিণাংশে সিলভার প্যাগোডা। প্যাগোডার গর্ভগৃহে ৯০ কিলোগ্রাম সোনার তৈরি বুদ্ধমূর্তি বিরাজমান। প্যাগোডার মধ্যে সোনা, রুপো, হীরের কারুকাজের জৌলুষ চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
এরপর গেলাম চার নদীর সঙ্গমস্থলে। আপার মেকং, লোয়ার মেকং, বাসাক এবং টনলে স্যাপ মিলিত হয়েছে নমপেনে। খুব মনোরম জায়গা। ভালো লাগলো। এখান থেকে গেলাম কাম্বোডিয়ার ভিক্টোরিয়া মনুমেন্ট দেখতে। ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পরে ১৯৫৮ সালে এই মনুমেন্টটি তৈরি করা হয়। পরে দেখলাম কাম্বোডিয়ার জাতীয় সংগ্রহশালাটিও। প্রচুর হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে এই মিউজিয়ামটিতে।
আঙ্কর ভাট
মিউজিয়াম দর্শন সেরে চলে এলাম নমপেনের প্রধান বাস টার্মিনাসে। যাচ্ছি সিয়েম রিপ। দুপুর আড়াইটেই বাস ছাড়ল। সিয়েম রিপ কাম্বোডিয়ার মন্দিরনগরী আঙ্কর ভাটের প্রবেশদ্বার। রাত ৯টা নাগাদ সিয়েম রিপে পৌঁছালাম। প্রচুর হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান-বাজার, পর্যটকে গমগম করছে শহরটা। আজ অনেকটা ঘোরাঘুরি হয়েছে। অনেকটা জার্নি করে সিয়েম রিপে পৌঁছেছি। হোটেলে ঢুকে পড়লাম।
আজ ৭ ফেব্রুয়ারি। আজ আঙ্কর ভাট ঘুরে দেখব। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিটের রকমফের আছে। যাঁরা গবেষণার জন্য আঙ্কোর ভাট যান, তাঁরা ৭ দিন থেকে ৩০ দিনের জন্য টিকিট কিনে নিতে পারেন। আমরা মাথাপিছু ৩৭ মার্কিন ডলার দিয়ে টিকিট কাটলাম।
প্রবেশ করলাম আঙ্কর ভাট মন্দির কমপ্লেক্সে। সিয়েম রিপ থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট আঙ্কর ভাটের অবস্থান। ৪০০ একর অঞ্চল জুড়ে এই মন্দির কমপ্লেক্স। দ্বাদশ শতকে কাম্বোডিয়ার রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মনের শাসনকালে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির কমপ্লেক্স। সময় লেগেছিল ৩০ বছর। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংস্কৃতির এলাকা এই মন্দির কমপ্লেক্স। হিন্দু ধর্মের প্রবল প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আঙ্কর ভাটে। তৈরির পরে বিভিন্ন মন্দির দেবতা বিষ্ণু, ব্রক্ষ্মা, শিবকে উৎসর্গ করা হয়। মন্দিরগাত্রে রামায়ণ, মহাভারতের নানা কাহিনি খোদিত রয়েছে। অনেক দেওয়াল চিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সব মন্দিরও অক্ষত নেই। বিষ্ণুমন্দিরটি অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম। মন্দিরের গায়ে সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখে আশ্চর্য হতে হয়। পরবর্তীকালে রাজা সপ্তম জয়বর্মন আঙ্কর ভাট চত্বরকে বৌদ্ধধর্মের প্রতি উৎসর্গ করেন।
প্রচণ্ড গরম আজ এখানে। লাইন দিয়ে এগিয়ে বিষ্ণু মন্দিরে ঢুকলাম। দেখলাম অনেকক্ষণ ধরে। কোন সে অতীতে তৈরি এই মন্দির এখনো আন্তরিক দর্শককে মুগধ করবে। আঙ্কর ভাটের অদূরেই তা-প্রহম মন্দির। রাজা জয়বর্মন এই মন্দিরটি তৈরি করিয়েছিলেন। একটি দৈত্যাকার বটগাছ মন্দিরটিকে পেঁচিয়ে ধরেছে। মন্দিরটির গায়ে পেঁচানো গাছটির শিকড়বাকড়গুলো দেখবার মতো। কত প্রাচীণ এই গাছটি বলতে পারি না। ভারত ও কাম্বোডিয়ার আর্কিওলজিক্যাল বিভাগ যৌথভাবে মন্দিরটিকে বাঁচানোর কাজ করছে। টুরিস্ট হিসেবেও আঙ্কর ভাট ভালো করে ঘুরে দেখার জন্য অন্তত তিনটি দিনের দরকার হয়।
এরপর দুপুরের খাওয়াদাওয়া। এখানকার ডাবগুলোর আকার বিশাল। একটা ডাব খেলেই পেট ভরে যায়। মধ্যাহ্নভোজন সেরে সবশেষে গেলাম আঙ্কর থম।
খেমের সাম্রাজ্যের শেষ রাজধানী আঙ্কর থমের স্থাপত্য-পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে মহাজাগতিক সৃষ্টিতত্ত্বকে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আঙ্কোর ভাটের মন্দিরগাত্রে খোদাই করা চিত্র।
রাতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখলাম। জমকালো নৃত্যানুষ্ঠান। ভালোই লাগল। সঙ্গে ছিল এলাহি ডিনারের আয়োজন। সিয়েম রিপের রাতের বাজার ঘুরে দেখলাম খানিকটা। এরপর রোমো (আমাদের এখানকার অটোরিক্সার মতো) করে হোটেলে ফিরলাম।
ভাসমান গ্রাম
৮ ফেব্রুয়ারি। আজ কাম্বোডিয়াতে আমাদের শেষ দিন। রাত পৌনে ৯ টায় ব্যাঙ্ককের বিমান ধরতে হবে। হাতে খানিকটা সময় রয়েছে। সকালে টন লে স্যাপ লেকের ভাসমান গ্রাম দেখতে গেলাম। সত্যিই অদ্ভুত গ্রাম। জলের মধ্যে খুঁটির ওপর মাচা বেঁধে সব ঘরবাড়ি। বসতবাড়ির সঙ্গে খাবারদাবার, হস্তশিল্প ও অন্যান্য নানা সামগ্রীর দোকানপাট রয়েছে এখানে। বিক্রিবাট্টা চলছে নৌকা থেকেও। এরপর আমরা গেলাম সিয়েম রিপের অন্যতম প্রাচীন বাট বো প্যাগোডা দেখতে। সিয়েম রিপের অন্যতম প্রাচীন প্যাগোডা। বৌদ্ধ প্যাগোডা। তবে হিন্দু ধর্মের নানা কাহিনির চিত্ররূপ দেখা যাবে প্যাগোডার দেওয়ালে।
ওয়াট থমেই
সবশেষে গেলাম ওয়াট থমেই প্যাগোডায়। আঙ্কর ভাটে যাওয়ার পথে পড়ে এই প্যাগোডা। খেমের রুজ আমলে সিয়েম রিপের এই অঞ্চলটি ছিল মৃত্যুভূমি। কমিউনিস্ট পার্টি অফ কাম্পুচিয়ার (সিকেপি) সদস্যদের খেমের রুজ বলা হত। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সিকেপি-শাসিত কাম্বোডিয়ায় গণহত্যা চলে নির্বিচারে। ওয়াট থমেই প্যাগোডায় সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতির চিহ্ন হিসেবে প্রচুর নরকঙ্কালের নানা অংশ রাখা আছে। মনটা কেমন দমে গেল। বৌদ্ধধর্মাবলম্বিত দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।
হোটেলে ফিরে এলাম। এবার ঘরে ফেরার পালা। গোছগাছ করে হোটেল থেকে চলে এলাম বিমানবন্দরে। ব্যাঙ্কক পৌঁছালাম রাত ১০টা নাগাদ। ব্যাঙ্কক থেকে বিমান উড়ল রাত ১১-৩৫-এ। দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছালাম রাত ১২ঃ৪০-এ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়িয়েছি। সত্যি বলতে কী, এই সফরটা খুব ভালো লেগেছিল। মনে হত দেশেই আছি। ঘরের কাছে এই বিদেশ ভ্রমণ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।