Follow us
Search
Close this search box.

অফবিট দার্জিলিং, চার ঠিকানা

অফবিট দার্জিলিং, চার ঠিকানা

বুনকুলুং

পাহাড়ের ধাপে ধাপে বজরার খেত। সামনেই সিংবুল টি এস্টেটের চায়ের বাগান। তার মধ্যে দিয়ে হাঁটা পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় একটা নদীর তীরে। জঙ্গল, পাহাড়, ফুল, প্রজাপতি, নদী, নানা শেডের সবুজ একত্রিত হয়ে এক আশ্চর্য করা ছবি বুনকুলুং গ্রামটি।

মিরিক থেকে বুনকুলুং ১৫ কিলোমিটার। বুনকুলুং বেড়াতে গেলে চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটবেন, নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়াবেন। দু-দুটো নদী বইছে গ্রামের মধ্যে দিয়ে। বালাসন আর মুর্মাখোলা। উন্নতমানের ট্রাউট চাষের জন্য দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল বুনকুলুংকে একটি মডেল গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে অনেক আগেই।

 

বুনকুলুং থেকে দিনে দিনে মিরিক লেক, বোকার মনাস্ট্রি, গয়াবাড়ির চা বাগান, সৌরিণী বা সৌরেনি বাজার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

যাওয়ার পথ

এন জে পি, শিলিগুড়ি থেকে মিরিক হয়ে বুনকুলুং ৪৮-৫০ কিলোমিটার। মিরিক পর্যন্ত শেয়ার গাড়িতে এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বুনকুলুং যাওয়া যাবে। দার্জিলিং থেকে মিরিক, সৌরিনী হয়ে বুনকুলুং পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা :
বুনকুলুং ইকো হাটস,ফোন ৯০৭৩০২৬১৪৫। বুনকুলুং রিট্রিট ইকো হাট, ফোন ৭৪২৭৯৯১৪৯১। বুনকুলুং জঙ্গল ক্যাম্প, ফোন ৯৬৭৪১২৩৪৪৯।

চাটাইধুরা

ব্যস্ত দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু ঘন সবুজ কনিফার অরণ্যে ঘেরা শান্ত নিরালা চাটাইধুরা আরেকটি শান্তির রাজ্য। দার্জিলিং জেলার নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। চাটাইধুরায় প্রকৃতি নিবিড়ভাবে ঘিরে থাকবে আপনাকে। প্রায় ৭,০০০ ফুট উচ্চতার চাটাইধুরা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য, সে দেখার ব্যাপার। চাটাইধুরার হাওয়াঘর ভিউপয়েন্ট থেকে নীচের উপত্যকা, কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ নানা শৃঙ্গ, দার্জিলিং শহর, সান্দাকফু শীর্ষের দৃশ্য খুব সুন্দর। খানিকটা ট্রেক করে হাওয়াঘর ভিউপয়েন্টে উঠতে হয়।

জঙ্গলের পাশের নিরালা রাস্তা ধরে হাঁটুন। নানা পাখির দেখা পাবেন। কাছেই পরিচিত ভ্রমণ ঠিকানা লেপচাজগৎ। চাটাইধুরা থেকে বড়জোর দেড় কিলোমিটার। হাঁটাপথেই লেপচাজগৎ থেকে বেড়িয়ে আসা যায়। চাটাইধুরা থেকে ঘুম ৫ কিলোমিটার। ঘুম স্টেশন থেকে টয়ট্রেনে চড়ে খানিকটা বেড়িয়ে আসতে পারেন। দিনে দিনে দার্জিলিং থেকেও বেড়িয়ে আসা যায়।

যাওয়ার পথ

শিলিগুড়ি থেকে চাটাইধুরা ৬৩ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি অথবা এন জে পি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি চাটাইধুরা চলে আসা যায়। শিলিগুড়ি থেকে ঘুম ৫৮ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি অথবা এন জে পি থেকে শেয়ার গাড়িতে ঘুম পৌঁছে সেখান থেকে আরেকটা গাড়িতে চাটাইধুরা পৌঁছাতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা

লপচান হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯১৮৬-৮১২২৯, ৮৩৪৩৮-১৯৮৩৯।

লামাগাঁও

বিজনবাড়ি থেকে ছবির মতো ১২ কিলোমিটারের পাকদণ্ডী পথ ধরে চলে আসুন দার্জিলিং জেলার লামাগাঁওয়ে । মূল দার্জিলিং শহর থেকে দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটারে। ৫,২০০ ফুট উচ্চতার লামাগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য এককথায় অসাধারণ। শীতে লামাগাঁওয়ের গভীর খাদ ঘন কুয়াশায় ভরে থাকে। জানলা, দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে আসে সেই কুয়াশা। গ্রীষ্মের লামাগাঁও আরামদায়ক। পাহাড়ের ঢালে জৈব চাষ হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লামাগাঁওয়ের ঘন সবুজের সঙ্গে কমলা রঙের মিশেল ঘটে। তখন লামাগাঁও বড় বর্ণময়। সত্যি কথা বলতে কী লামাগাঁও চমৎকার।

পরিষ্কার দিনে লামাগাঁওয়ের পাহাড় থেকে দার্জিলিংয়ের বিস্তৃত চা বাগান দেখা যায়। দেখা যায় দার্জিলিং শহরটিকেও। রাতের দার্জিলিংয়ের আলোর মালা খুবই রোমান্টিক। আর মাথার উপরে থাকবে তারকাখচিত আকাশ। সকালে লামাগাঁওয়ের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। পাখির ডাকে চমৎকৃত হবেন। পাহাড়ি ফুলের রঙের বাহার মন ভালো করে দেবে। চোখে পড়তে পারে অর্কিডগুচ্ছ।

যেতে পারেন ১২ কিলোমিটার দূরের বিজনবাড়ি। যাওয়ার রাস্তাটি খুব সুন্দর। চাইলে বিজনবাড়িতে ছোটা রঙ্গীতে মাছ ধরতে পারেন। ছোট ছোট ট্রেক করা যায় লামাগাঁও থেকে। আর প্রকৃতির মধ্যে একশ শতাংশ বিশ্রামের সু্যোগ তো রইলই।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে লামাগাঁও ১০২ কিলোমিটার। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি লামাগাঁও পৌঁছে যাওয়া যায়। অন্যথায় এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত এসে সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে লামাগাঁও হবে। দার্জিলিং থেকে লামাগাঁও ৩০ কিলোমিটার, ঘুম থেকে ৪০ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

লামাগাঁও হোমস্টে। এটি লামাগাঁওয়ের পুরনো হোমস্টে। হোমস্টের জমিতে বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করা হয়। ট্রেকিং, ফিশিং, সাইটসিয়িংয়ের ব্যাপারে হোমস্টে থেকে সহায়তা করা হয়। ফোনঃ ৭০৪৭০-৯৮৬৯৫।

বিজনবাড়ি

দার্জিলিংয়ের ভ্রমণ মানচিত্রে বিজনবাড়ি দ্রুত বিশিষ্ট জায়গা করে নিচ্ছে। ঘুম স্টেশন রোড় থেকে ২২ কিলোমিটার। পাহাড়ে ঘেরা একটি উপত্যকার মধ্যে বিজনবাড়ির অবস্থান। উচ্চতা ২,৫০০ ফুট। পথে পড়বে হিমা জলপ্রপাত, কয়েকটি চোখ জুড়ানো চা বাগান। আর পথের কয়েকটি জায়গা থেকে উপরের দিকে দার্জিলিং শহরটিকে দেখা যাবে নতুন চোখে। সবমিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর এক পথ ধরে যাত্রা শেষ আপনি পৌঁছাবেন বিজনবাড়ি।

বিজনবাড়ির এক পাশ দিয়ে বইছে ছোটা রঙ্গীত নদী। এ কারণে বিজনবাড়ির উপত্যকাটি সুফলা। কমলালেবু্, আনারসের বেশ কিছু বাগিচা রয়েছে নদী-সন্নিহিত এলাকায়। ফল ছাড়াও নানা সবজি ও শস্যেরও চাষ হয় বিজনবাড়ির উর্বর জমিতে। বিজনবাড়ির পুলবাজার বা পালবাজার এলাকায় রয়েছে সুন্দর একটি মন্দির। পাথরে খোদাই করে দুর্গা, শিব, গণেশের মূর্তি রয়েছে মন্দিরটিতে।

বিজনবাড়ি ঘুরে দেখতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। দেখবেন দার্জিলিংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবনযাপন। উপত্যকার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। ছোটা রঙ্গীত নদীর ধারে গিয়ে বসুন। চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। হাইকিং, ট্রেকিংয়ে আগ্রহ থাকলে বিজনবাড়ি দারুণ এক স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র হতে পারে। বিজনবাড়ি থেকে রেলিং (৮ কিলোমিটার) হাইকিং হতে পারে। হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সোম টি এস্টেট, ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। চলে যেতে পারেন কলবংয়ে। এখান থেকে সিকিমের কিছু অঞ্চল চমৎকার দেখা যায়।

যাওয়ার পথ

সকালে দার্জিলিংয়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার বাস ছাড়ে। দার্জিলিংয়ের চক বাজার এলাকা থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাবেন। ঘুম থেকেও বিজনবাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।

থাকার ব্যবস্থা

মেগিটার হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২১-৭৮১১৩, ৯৩৮২২-০৫৬৭২। বিজ্জু ভিলেজ রিট্রিট, ফোনঃ ৯৭৩৫৫-৮৫৫৫৫। রেলিং রঙ্গীত রিসর্ট, ফোনঃ ৯৮০০৩-১৫৩৪০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *