উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট শান্ত সুন্দর একটি গ্রাম কনকচৌরি। হিমালয়ের নানা শৃঙ্গ দেখা যায় কনকচৌরি থেকে। অবস্থানগত দিক থেকে বিশেষ গুরত্ব রয়েছে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটির। কনকচৌরিকে ভিত্তি করে বেড়িয়ে নেওয়া যায় কার্তিকম্বামী মন্দির, দেওরিয়াতাল, তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশিলা। কীভাবে বেড়াবেন, কী কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন, সে-সব তথ্য-সহ ভ্রমণ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন তুষার পাত্র।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিদ্বার। হরিদ্বার থেকে গাড়িতে রুদ্রপ্রয়াগ (১৬২ কিলোমিটার)। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে গাড়িতে কনকচৌরি (৪০ কিলোমিটার)।
কী কী দেখবেন
কার্তিকম্বামী মন্দির, দেওরিয়াতাল, চোপতা, তুঙ্গনাথ, চন্দ্রশিলা।
কীভাবে বেড়াবেন
প্রথমদিন: হাওড়া থেকে দুপুরে উপাসনা এক্সপ্রসে হরিদ্বারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।
দ্বিতীয় দিন: বিকেল নাগাদ হরিদ্বারে নেমে এ দিন হরিদ্বারেই রাত্রিবাস।
তৃতীয় দিন: সকালে গাড়িতে বা সরকারি বাসে রুদ্রপ্রয়াগের উদ্দেশে যাত্রা। দুপুরে রুদ্রপ্রয়াগে পৌঁছে দেখে নিন অলকানন্দা ও মন্দাকিনীর সঙ্গম। আর সন্ধ্যায় দেখুন আরতি। এখানে প্রচুর হোটেল। সবচেয়ে ভালো গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের (জি এম ভি এন) গেস্টহাউস। সস্তায় ভালো কালী কমলীর ধর্মশালা।
চতুর্থ দিন: রুদ্রপ্রয়াগ থেকে পুরো গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার গাড়িতে চলে আসুন কনকচৌরি। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৪০ কিলোমিটার। প্রায় ৯,২০০ ফুট উচ্চতার কনকচৌরি থেকে হিমালয়ের উন্নতশির সব শৃঙ্গ দেখে মুগধ হবেন। ছোট গ্রাম কনকচৌরি। এখান থেকেই কার্তিকস্বামী মন্দিরে যাওয়ার ট্রেকিং শুরু হবে। কনকচৌরি থেকে চড়াই পথে ৩ কিলোমিটার পথ ট্রেক করে কার্তিকস্বামী মন্দিরে পৌঁছাতে হয়। কনকচৌরিতে থাকার জন্যে কিছু মাঝারি মানের হোটেল আছে। শ্রী কার্তিকেয় প্যালেস এবং মায়াদীপ হলিডে হোম থাকার ভালো জায়গা।
পঞ্চম দিন: ভোর তিনটের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে কার্তিকস্বামী মন্দিরের উদ্দেশে। দু’ঘন্টার হাঁটাপথ। একদিকে হিমালয়ের তুষারমণ্ডিত সব শৃঙ্গ, আন্যদিকে উপত্যকা। পথের শোভা হাঁটার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। আর এই পরিবেশে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার পরে মনে হবে পথশ্রম যেটুকু, তা সার্থক। সেই সার্থকথায়, প্রসন্নতায় আপনার অন্তরাত্মা যে পরিতৃপ্ত হবে তা হলফ করে বলা চলে।
ষষ্ঠ দিন: আজ কনকচৌরি থেকে আমরা যাব সারি গ্ৰাম। এখানকার হোটেলে রাত্রিবাস করে পরের দিন সকালে দেওরিয়াতাল থেকে বেড়িয়ে আসা যেতে পারে। অন্যথায় সারিতে না থেকে সরাসরি দেওরিয়াতাল গিয়ে টেন্টে রাত কাটিয়ে পরের দিন ফিরে আসুন সারি গ্ৰামে। সারিতে থাকতে পারেন রাকেশ টুরিস্ট লজে। আরও হোটেল আছে।
৮১৪৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দেওরিয়াতাল একটি সবুজাভ হ্রদ। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে দেওরিয়াতালের জলে চৌখাম্বার শৃঙ্গ প্রতিবিম্বিত হয়। সেই অনির্বচনীয় দৃশ্য সারা জীবনের অপার্থিব সঞ্চয় হয়ে থাকবে।
সপ্তম দিন: আজ সারি গ্ৰাম থেকে চোপতা যাওয়ার দিন। দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। চোপতা পৌঁছে বিশ্রাম নিন। সন্ধ্যাবেলায় ঘুরে আসুন চোপতা বাজার থেকে। থাকতে পারেন চৌহান গেস্টহাউস বা হোটেল নীলকণ্ঠে। আরও হোটেল আছে।
গাড়োয়াল হিমালয়ের ৮,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চোপতাকে বলা হয় ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’। সবুজ বুগিয়াল(বিস্তৃত তৃণভূমি) পরিবেষ্টিত চোপতা থেকে হিমালয়ের তুষারাবৃত নানা শৃঙ্গ দেখবেন। চোপতার একদিকে রুদ্রনাথ ও কল্পেশ্বর, অন্যদিকে কেদারনাথ ও মদমহেশ্বর এবং উপরের দিকে তুঙ্গনাথ। অর্থাৎ পাঁচ শৈবতীর্থে যাওয়ার পথগুলির মধ্যস্থলে চোপতার অবস্থান। বছরের যে কোনও মরশুমেই চোপতা উপত্যকায় বেড়াতে যাওয়া যায়। গ্রীষ্মে শীতল আবহাওয়ার চোপতা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য। বর্ষায় বুগিয়াল জুড়ে বৃষ্টি নামে। শীতে স্কিয়িং করা যায় চোপতায়। পক্ষীপ্রেমীদের কাছেও চোপতা কম আকর্ষণীয় নয়। দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি আছে চোপতা অঞ্চলে।
অষ্টম দিন: আজ খুব ভোরে উঠে যাত্রা শুরু হবে তুঙ্গনাথের উদ্দেশে। প্রায় ৩.৩ কিলোমিটার উঠতে হবে চড়াই পথে। সময় লাগবে ৩-৪ ঘন্টা। চাইলে ঘোড়াতেও যেতে পারেন। পথের দৃশ্য মনে গেঁথে থাকবে চিরকাল। যতটা সম্ভব লাগেজ চোপতার হোটেলে রেখে আসবেন। মন্দির দর্শন করে তুঙ্গনাথে রাত্রিবাস। থাকার জন্য রয়েছে কালী কমলীর ধর্মশালা, মন্দির কমিটির গেস্টহাউস এবং গণেশ হোমস্টে।
নবম দিন: খুব ভোরে উঠে রওনা দিন চন্দ্রশিলার উদ্দেশে। সঙ্গে গাইড নিলে সুবিধা হবে। চন্দ্রশিলায় পৌঁছে মনে হবে এ কোথায় এলাম। এখান থেকে ৩৬০ডিগ্ৰি ভিউ আপনাকে মোহিত করবেই। ১২,০০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রশিলা থেকে দেখা যায় নন্দাদেবী, ত্রিশূল, চৌখাম্বা, বান্দরপুঞ্ছ প্রভৃতির মতো উত্তর হিমালয়ের নামী সব পর্বতশৃঙ্গ। প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রশিলাকে হিমালয়ের মহামহিম সব শৃঙ্গ দর্শনের গ্যালারি বলা চলে। আর একবার তুঙ্গনাথ দর্শন করে নেমে আসুন চোপতায়। চোপতা থেকে গাড়িতে উখিমঠ। উখিমঠে রাত্রিবাস। থাকুন জি এম ভি এনের লজে।
দশম দিন: উখিমঠ থেকে সকালে হরিদ্বারের উদ্দেশে যাত্রা। হরিদ্বার থেকে রাতের উপাসনা বা কুম্ভ এক্সপ্রস ধরে বাড়ির পথে।
একাদশ দিন: সারা দিন রাত ট্রেনে।
দ্বাদশ দিন: ভোরে হাওড়ায়।