Follow us
Search
Close this search box.

সিঙ্গালিলার গিরিশিরা গুরাসের রঙে সাজবে এখন

সিঙ্গালিলার গিরিশিরা গুরাসের রঙে সাজবে এখন

পশ্চিম সিকিমের সিঙ্গালিলা গিরিশিরা বরাবর ১০৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির বিস্তার। এই সিঙ্গালিলা গিরিশিরা ভারত ও নেপালের মধ্যে আন্তুর্জাতিক সীমানা গঠন করেছে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সিঙ্গালিলা গিরিশিরা ধরে রাশি রাশি রডোডেনড্রন ফুল ফোটে। বার্সের রডোডেনড্রন আভয়ারণ্য এ সময়ে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। রডোডেনড্রনের সঙ্গে ফোটে ম্যাগনোলিয়া, প্রিমুলা। ওক, পাইনের বনে ফুটে থাকে নানা প্রজাতির অর্কিড। আরবোরিয়াম, ফ্যালকোনেরি, ক্যাম্পানুল্যাটাম, সিনাবারিনাম– এগুলি রডোডেনড্রনের নানা প্রজাতি। দেখা যায় বার্সের অরণ্যে। রডোডেনড্রনের দেশীয় নাম গুরাস।

ফুলে ছাওয়া বার্সে দেখা যায় প্রধাণত মার্চের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। মে মাসের প্রথম ভাগেও কিছু ফুল দেখা যায়। রঙিন সেই প্রেক্ষাপটে চোখে পড়তে পারে রংবাহারী পাখি মোনাল, কালিজ। বার্সের জঙ্গলে লেপার্ড, হিমালয়ান পাম সিভেট, হিমালয়ান লাঙ্গুর আছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর স্যাংচুয়ারি বন্ধ থাকে।

গড়ে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারিতে প্রবেশ করা যায় হিলে, ডেন্টাম ও সোরেং হয়ে। তুলনামূলক ভাবে হিলে হয়ে বার্সে পৌঁছানো সুবিধাজনক। কারণ হিলে পর্যন্ত গাড়ি যায়। হিলে থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার পথ ট্রেক করে বার্সে পৌঁছাতে হবে। সাধারণত দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে হিলে-বার্সে ট্রেকপথ এবং বার্সে থেকে দেখা যায় কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা, পাণ্ডিম, কাব্রু, জানু শৃঙ্গাবলী।

সকাল সকাল হিলে থেকে বার্সে হাঁটা শুরু করাই ভালো। তার মানে, আগের রাতটা বার্সের কাছাকাছি কোথাও থাকতে হয়। হিলেতে থাকা সুবিধাজনক বটে। কিন্তু এখানে হাতে গোনা কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। রাত্রিবাসের জন্য ওখরে সুবিধাজনক জায়গা। এটি একটি সুন্দর জনপদ। অনেক হোমস্টে রয়েছে ওখরেতে। জায়গাটা বেড়িয়ে দেখতেও ভালো লাগবে। ওখরে থেকে হিলে ১১ কিলোমিটার। সকালে ওখরে থেকে একটা গাড়ি ধরে হিলে চলে আসা যায়।

এন জে পি থেকে জোরথাং হয়ে ওখরে ১৩০ কিলোমিটার। গ্যাংটক থেকে জোরথাং ৮৩ কিলোমিটার। এন জে পি, শিলিগুড়ি, বাগগডোগরা থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি ওখরে চলে আসা যায়। শিলিগুড়ি থেকে জোরথাং যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। জোরথাং থেকে ওখরে ৪০ কিলোমিটার। জোরথাং থেকে শেয়ার গাড়িতে বা গাড়ি রিজার্ভ করে ওখরে চলে আসা যেতে পারে।

ফেরার সময় বার্সে থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার পথ ট্রেক করে হিলে ফিরতে হবে। হিলে থেকে ওখরে বা জোরথাং এবং সেখান থেকে শিলিগুড়ি, এন জে পি বা চাইলে গ্যাংটক চলে আসা যেতে পারে। হিলে থেকে সরাসরি শিলিগুড়ির গাড়িও পাওয়া যায়।

একটা রাত বার্সে অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা গেলে সে হবে দারুন এক অভিজ্ঞতা। সেক্ষেত্রে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে গুরাসকুঞ্জই শ্রেয়।

থাকার ব্যবস্থা
বার্সে
বার্সে গুরাস কুঞ্জ, বার্সে, ফোনঃ ০৯৮০০৩ ৯৮৩০৯
প্রয়োজনে তথ্যের জন্য সিকিম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে
যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরেঃ ০৩৫৯২ ২০১৩৭২।

ওখরে
শেরপা হোমস্টে, ফোনঃ ০৮৩৭২৮ ৩৬০১৩
রয়্যাল বার্সে হোমস্টে, ফোনঃ ০৮৯৪২৮ ৩১৮৭৫
শলাখা হোমস্টে, ফোনঃ ০৮১৪৫৮ ৮৪১৫৬
ম্যাগনোলিয়া ভিলেজ হোমস্টে, ফোনঃ ০৯৬০৯৮ ৫৬৪১৪

হিলে
মাশরুম হাট হোহস্টে, ফোনঃ ০৭০২৯৬ ৯৬০৮১

‘অবাক হয়ে দেখেছিলাম বার্সের বনজ্যোৎস্না’

তুষার পাত্র

২০২৪’এর মে মাসের কথা। ওখরেতে এক রাত কাটিয়ে সকালে হিলে পৌঁছালাম। কয়েকজনের দল। ড্রাইভারের বাড়িতে অতিরিক্ত লাগেজ রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। তারপর হাঁটা শুরু। বার্সের অরণ্যের মধ্যে গুরাসকুঞ্জের ডর্মেটরিতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।

ব্যাগপত্তর রেখে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ডান দিকের গেট থেকে সামনের রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পৌঁছালাম একটা ভিউ পয়েন্টে। দু’পাশে রডোডেনড্রনের বন। আকাশ মেঘলা। সে ভাবে কিছু দেখতে না পেলেও একদল স্কুল পড়ুয়ার নাচে গানে পরিবেশটা ভারি সুন্দর হয়ে উঠেছিল। সন্ধ্যে নামার আগে ফিরে এলাম গুরাসকুঞ্জে।

রাত্রি বাসের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। শৌচাগার পছন্দ না হলে আছে প্রকৃতি, জঙ্গল। দশ হাজার ফুট উচ্চতায়, জঙ্গলে ঘেরা বিদ্যুতহীন এ রকম এক পান্ডববর্জিত অঞ্চলে এর বেশি আশা করাটাই ঠিক হবে না। ডর্মেটরি ছাড়াও দু’শয্যার ঘর রয়েছে। আছে টেন্টের ব্যবস্থাও। গোটা চারেক টেন্ট পড়েছে সামনের মাঠে। এখানে ইলেক্ট্রিসিটি নেই, মোমবাতি ভরসা। চা আর পপকর্ণ সহযোগে শুরু হল আমাদের সান্ধ্য আড্ডা। চলল ঘন্টা খানেক। এখানে রাত আটটায় ডিনার। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শয্যা ত্যাগ করতে হয়েছেল। সঙ্গে কল্যাণ। অন্ধকারে ঢাকা গুরাসকুঞ্জ। টর্চের আলোয় অন্ধকার ঠেলে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলাম। ঘরে ফিরে যাওয়ার আগে নীচের দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম গুরাসকুঞ্জের বারান্দায়। একটা শিহরণ খেলে গেল যেন শরীর-মনে। বাইরে ঠাণ্ডা, সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে সামনের কোনও গাছে রাতচোরা পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দে চমকে উঠেছিলাম। কী এক মায়াময় চন্দ্রালোকে যেন জেগে আছে বন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই বনজোৎস্না দেখেছিলাম সে রাতে।

ব্যানার ফটো সৌজন্যঃ কিপেপিও।
অন্য ফটোগুলি তুলেছেন তুষার পাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *