বর্ষায় ওড়িশার কোরাপুট ও ছত্তিশগড়ের চিত্রকোট ও জগদলপুর বেড়ানোর কথার দ্বিতীয় পর্ব এবারের লেখাটি।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। সকাল সাড়ে ৭টায় কোরাপুটের হোটেল থেকে চেক আউট করে চলে এলাম কোরাপুট স্টেশনে। সাড়ে ৮টার হীরাকুণ্ড এক্সপ্রেস ধরব। আজ আমাদের গন্তব্য ছত্তিশগড়ের জগদলপুর। রেলপথে কোরাপুট-জগদলপুর দূরত্ব ১০৬ কিলোমিটার। চার রাত ছিলাম কোরাপুটে। ওড়িশার অরণ্য-পাহাড়, আদিবাসী সংস্কৃতির কোরাপুট বেড়ানোর কথা বলেছি ‘বর্ষাস্নাত কোরাপুট’ লেখাটিতে।
‘বর্ষাস্নাত কোরাপুট’ লেখাটি পড়তে পারেন এখানেঃ https://torsa.in/rain-soaked-koraput/
জগদলপুর স্টেশন থেকে একটা গাড়িতে চলে এলাম ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলার জলপ্রপাতের জন্য খ্যাত চিত্রকোটে। বর্ষার চিত্রকোট জলপ্রপাত দেখতেই এ সময়ে আসা। জগদলপুর থেকে চিত্রকোট পৌঁছাতে ঘন্টাদেড়েক সময় লাগল। পূর্ব ব্যবস্থা মতো উঠলাম ছত্তিশগড় সরকারের দনদমি লাক্সারি রিসর্টে। জগদলপুর থেকে ৩৮ কিলোমিটার পশ্চিমে চিত্রকোট জলপ্রপাতের অবস্থান।
বিকেলে গেলাম জলপ্রপাত দেখতে। বর্ষার চিত্রকোট উদ্দাম। ইন্দ্রাবতী নদী সমতল দিয়ে বয়ে এসে প্রায় ৯৮ ফুট নীচে ঝাঁপ দিয়েছে এখানে। সৃষ্টি হয়েছে এই প্রশস্ত জলপ্রপাতের। চিত্রকোট ভারতের সবচেয়ে প্রশস্ত জলপ্রপাত। বর্ষায় এই জলপ্রপাত প্রায় ৯৮০ ফুট প্রস্থে পৌঁছায়। এ সময়ে জলপ্রপাতের বিস্তার ঘোড়ার খুরের আকৃতির মতো দেখতে লাগে।
চিত্রকোট জলপ্রপাতকে ‘ভারতের নায়াগ্রা’, ‘ছোট নায়াগ্রা’ ইত্যাদি বলা হয়। বিশ্বখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত আমেরিকা ও কানাডার সীমান্তে অবস্থিত। আমাদের চিত্রকোট অবশ্য তার মতোই। ইন্দ্রাবতী নদীর উৎপত্তি ওডিশার কালাহান্ডি অঞ্চলে। চিত্রকোট থেকে আরও প্রায় ২৪০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পরে ইন্দ্রাবতী গোদাবরী নদীতে মিলিত হয়েছে।
বিকেলের সূর্যের কিরণের ছোপ লাগল প্রপাতধারায়। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। অনেকটা নীচে রাশি রাশি জলকণা উড়ছে বাতাসে। বর্ষায় (জুলাই থেকে অক্টোবর) চিত্রকোট জলপ্রপাতের জলকণায় সৃষ্ট কুয়াশায় প্রায়শই রংধনু উদিত হয়। শ’দুয়েক সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নেমে এলাম নদীর তীরে। মুখোমুখি জলপ্রপাত। অপরূপ সে দৃশ্য। সার্থক সিঁড়ি ভেঙে নামা-ওঠা।
পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। চিত্রকোটের কাছাকাছির মধ্যে আরও কয়েকটি জলপ্রপাত দেখা উদ্দেশ্য। সেইসঙ্গে দেখা যাবে প্রাচীন মন্দির। প্রথমে গেলাম মেন্দ্রী ঘুমর জলপ্রপাত দেখতে। সবুজে মোড়া জায়গাটা সত্যিই শান্তিদায়ক। বর্ষার তুমুল সবুজের রাজ্যপাটের মধ্যে দিয়ে ৩০০ ফুট উচ্চতা থেকে নেমে এসেছে মেন্দ্রী ঘুমর।
মেন্দ্রী ঘুমর জলপ্রপাত সংলগ্ন অঞ্চলটি ওডিশার একটি সুন্দর ইকোটুরিজম ঠিকানা। বর্ষায় এই প্রপাতটির প্রকৃত উড়ানটি চাক্ষুষ করা যায়। এরপরে তামড়া ঘুমর ও সাতধারা জলপ্রপাত দেখা হল। বর্ষায় জাগে এরা।
বস্তার জেলার বারসুর একটি প্রাচীন শহর। বারসুর এলাকায় ঢুকলেই সেই প্রাচীনত্বের আঘ্রাণ পাওয়া যায়। বারসুরে একাদশ শতকের বত্তিসা মন্দির, মামা-বাঞ্ছা (মামা-ভাগ্নে) মন্দির, চন্দ্রাদিত্য মন্দির দেখা হল। বত্তিসা মন্দিরে দুটি গর্ভগৃহ। এমনটা চট করে দেখা যায় না। বত্রিশটা স্তম্ভ রয়েছে এই মন্দিরে। গড়নটি আকৃষ্ট করে। অবশ্য গঠনরীতির দিক থেকে তিনটি মন্দিরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
কাল জগদলপুরে ফিরে যাব। দেখতে দেখতে, থামতে থামতে যাওয়ার পরিকল্পনা। ছত্তিশগড়ের আরেক খ্যাতনামা জলপ্রপাত তিরথগড়, দলপত সাগর লেক, দন্তেশ্বরী মন্দির, বস্তার রাজপ্রাসাদ ইত্যাদি দেখে জগদলপুরে পৌঁছাব। সেই ভ্রমণের কথা পরের লেখায়।
সর্বোচ্চ স্লাইডার ফটো সৌজন্যঃ ছত্তিশগড় টুরিজম।
অন্যান্য ফটোগুলি তুলেছেন লেখক সুব্রত ঘোষ ও পাপিয়া ঘোষ।