Follow us
Search
Close this search box.

তাওয়াং থেকে কাজিরাঙ্গায়

তাওয়াং থেকে কাজিরাঙ্গায়

কাল তাওয়াং থেকে গিয়েছিলাম বুমলা পাস। ভারত-চিন সীমান্ত দেখা হয়েছে দূর থেকে। তিনটে রাত কাটল তাওয়াংয়ে। এবার অরুণাচল প্রদেশ থেকে ফেরার পালা। ইতিমধ্যে, চোট লেগেছে বাঁ-হাতে। গৃহে থাকলে উঃ আঃ করতে করতে সেবা-যত্নের আশা করা যায়। এখানে সেটি হবার নয়। সঙ্গি, গৃহিনীও বটে, ছবি তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অচেনা জায়গা, অচেনা পথে যাত্রা, এ-সব যে ওষুধের মতো কাজ করতে পারে, দৈহিক বেদনা অনেকটা ভুলিয়ে দিতে পারে তা সময়ে সময়ে বোধ হতে থাকল। আমি সুস্থ হতে থাকলাম পাহাড়ের পথ-পথে।

আজ ২৮ এপ্রিল, ২০২৪। আজকের গন্তব্য বমডিলা। রাতে বমডিলাতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পরবর্তী গন্তব্য অসমের কাজিরাঙ্গা। এবারের ভ্রমণের এটাই শেষ পর্যায়। তারপর কামাক্ষ্যা মন্দিরে পুজো দিয়ে ঘরে ফেরা।

তাওয়াং থেকে সড়কপথে বমডিলার দূরত্ব ১৭৭ কিলোমিটার। পথে দেখা হল দুর্গামন্দির ও দিরাং মনাস্ট্রি। পেরলাম ৯,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সেলা টানেল। বছরভর অসমের গুয়াহাটি ও চিন সীমান্ত ছোঁয়া তাওয়াংয়ের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় সেলা টানেলের গুরুত্ব এখন অপরিসীম। মাত্রই খুলেছে এ পথ। ২০২৪-এর ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সেলা টানেলের উদ্বোধন করেছেন।

পথে লাঞ্চ হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলার সদরদপ্তর বমডিলা পৌঁছালাম বিকেলে। উঠলাম গ্রিন ভিউ নামের একটি হোটেলে। পাহাড়ি পথে দীর্ঘ যাত্রা হয়েছে। ফলে এ দিনের মতো বিশ্রাম।

পরের দিন (২৯ এপ্রিল) সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে কাজিরাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেওয়া গেল। বমডিলা থেকে কাজিরাঙ্গা ২১০ কিলোমিটার। তেজপুরে ব্রহ্মপুত্রের সেতু পেরলাম। পথের এক ছিমছাম রেস্তোরাঁয় দুপুরের আহার সারা হল। কাজিরাঙ্গায় পৌঁছালাম বিকেলে। উঠলাম হোটেল ভিলা দি রিট্রিটে।

সকাল সকাল আমরা প্রস্তুত। সকালের জঙ্গল সাফারি সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা। কোহরা জোন বা সেন্ট্রাল জোনে এ বেলার সাফারি। বিকেলের স্লটেও সাফারি বুক করে রেখেছি।

লেখকের অসম-অরুণাচল ভ্রমণের আগের তিন পর্ব
‘ভ্রমণ অরুণাচলে’ https://torsa.in/arunachal-assam-travel/
‘তাওয়াংয়ে ইতিহাস, বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রকৃতি একসঙ্গে বসত করে’ https://torsa.in/tawang-travel/
‘বুমলা পাস হয়ে ভারত-চিন সীমান্তে’ https://torsa.in/bumla-pass-travel//

ব্রহ্মপুত্র নদ বা নদীর তীরের কাজিরাঙ্গার অরণ্যে দিগন্ত ছোঁয়া সব ঘাষের জঙ্গল রয়েছে। বুনো আখের আড্ডা দেখলাম। বিশাল তৃণভূমির মধ্যে ছড়ানো-ছেটানো বৃক্ষের মধ্যে চালতা, আমলকী, শিমূল তুলোর গাছ চোখে পড়ল। ঘাস নানা প্রকারের। লম্বা লম্বা ঘাস (এলিফ্যান্ট গ্রাস) জঙ্গলের পাশাপাশি খর্বাকৃতির ঘাসের মাঠও দেখা গেল। জলাভূমি রয়েছে। গন্ডারের জন্য বিশেষ খ্যাতি এ অরণ্যের। কাজিরাঙ্গা হাতিরও জঙ্গল। জলে দাপিয়ে বেড়ানো মহিষদেরও আবাস কাজিরাঙ্গার জঙ্গল। এই সব বিশালদেহী তৃণভোজী প্রাণীর বসবাসের ও চরে বেড়ানোর সুবিধার জন্যই কী কাজিরাঙ্গার তৃণভূমি-প্রধান এমন অরণ্য। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অরণ্যের জমি কিন্ত অত্যন্ত সুফলা। জঙ্গল খুব সবুজ তাই। কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও বটে। জঙ্গল ভ্রমণে গন্ডার, হাতি, দুটিকেই দেখা গেল। প্রচুর পাখি দেখলাম।

বিকেলের সাফারি ছিল অরণ্যের পশ্চিমাংশে। বাগোরি গেট হয়ে। হাতির পিঠে চড়ে ঘাসবনের মধ্যে দিয়ে গন্ডারের সন্ধান এখানকার জনপ্রিয় সাফারি। আমরা জিপ সাফারিতে। বিকেলের আভা দেখলাম লম্বা লম্বা হাতি-ঘাসের বনে। ইংরেজিতে ‘এলিফ্যান্ট গ্রাস’ বলা হয়। উগান্ডা গ্রাসও নামে পরিচিত। প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে এ ঘাসের। শরীরকে পরিশুদ্ধ করার তথা ডিটক্সিফিকেশনের গুণ রয়েছে হাতি-ঘাসে। তারপর চারিদিকে ধূপছায়া গোধূলী নামল। আঁধারে জেগে থাকবে জঙ্গল।

বিকেলের সাফারিতে গন্ডারের সঙ্গে উপরি পাওনা একগুচ্ছ বুনোমোষ। আশার কথা, গন্ডারের সংখ্যা বেড়েছে। লাঙ্গুর দেখলাম। এই অরণ্যে জলাভূমিতে বিচরণকারী হরিণ (ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার) রয়েছে। হরিণ দেখেছি কিছু। তাদের মধ্যে এই প্রজাতির হরিণ ছিল কিনা বলতে পারি না। হগ ডিয়ার আছে এ জঙ্গলে। সহজে দেখা যায় না অবশ্য? হলুক গিবনও আছে কিছু। এ জঙ্গল বাঘেরও জঙ্গল। কিছু প্রাণী বিপন্নও বটে।

আজ ১ মে। কাজিরাঙ্গা থেকে আমরা সোজা যাব কামাক্ষ্যা মন্দির। দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার। সকাল ৯ টায় রওনা দিয়ে কামাক্ষ্যা মন্দিরে পৌঁছালাম বেলা দেড়টা নাগাদ। গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য ভোরবেলা থেকে ভক্তদের লাইন পড়েছে। অগত্যা বাইরে থেকেই পুজো দিলাম।

পুজোর জন্য দুপুরে খাওয়া হয়নি। বৈকালিক আহার সেরে চলে এলাম গুয়াহাটির বিমানবন্দরে। কলকাতাগামী বিমান উড়ল রাত সোয়া ৯টায়।

ফটোঃ পাপিয়া ঘোষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *