মহানন্দা অভয়ারণ্যের সর্বোচ্চ পয়েন্ট লাটপাঞ্চার। উচ্চতা ৫,০০০ ফুট। পাখির আবাস হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে লাটপাঞ্চার। রুফাস নেকড হর্নবিল, মিনিভেট, ফ্যালকন, ঈগল, ক্রেস্টেড সারপেন্ট ঈগল, স্কারলেট মিনিভেট, সুলতান টিট, এমারেল্ড ড্রোভ, গ্রিন-বিলড মালখোয়া, ব্ল্যাক বাজা, মাউন্টেন স্কপস আউল ইত্যাদি সহ ২০০-র বেশি পাখির দেখা পাওয়া যায় লাটপাঞ্চারে। লাটপাঞ্চার এবং লাটপাঞ্চার-সংলগ্ন অন্যান্য গ্রাম যেমন ৬-মাইল গ্রাম, শেল্পু, সিটং জুড়ে বার্ডিং অঞ্চলের বিস্তার। আর আছে প্রজাপতি। বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাওয়া যাবে লাটপাঞ্চারে। দূরাকাশে থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
একেবারে প্রকৃতির অভ্যন্তরে থেকে প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলকে চিনতে জানতে চাইলে লাটপাঞ্চারে একবার যেতেই হয়। আগ্রহীরা আঞ্চলিক গাইড সঙ্গে নিয়ে জঙ্গল-পথে ট্রেক করতে পারেন। পার্বত্য অরণ্যের রুপ রস গন্ধ বর্ণের একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। রক ক্লাইম্বিংয়ের সু্যোগ আছে। নেচার স্টাডি ক্যাম্প আয়োজিত হতে পারে।
লাটপাঞ্চার থেকে অহলদাড়া ৩ কিলোমিটার মাত্র। অহলদাড়া পাহাড়ের শীর্ষ থেকে সূর্যোদয় দেখুন। প্রথমে রাঙিয়ে ওঠে পুবের আকাশ। তারপর জ্বলে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা। রঙের খেলা শুরু হয় কাব্রু, সিনিয়ালচু শৃঙ্গে। সেই জাদুকরী সূর্যোদয়ের সাক্ষী থাকতে খুব ভোরে পৌঁছে যেতে হবে অহলদাড়ায়। অন্যথায় আগের দিনেই পৌঁছে যেতে হবে অহলদাড়ার পাহাড়ে। ওখানে থাকার ব্যবস্থা আছে।
দার্জিলিং জেলার নতুন পর্যটন ঠিকানা অহলদাড়া অল্পদিনেই খ্যাতি অর্জন করেছে তার চারপাশের দৃশ্যপটের জন্য। আর সানরাইজ পয়েন্ট হিসেবে অহলদাড়ার তুলনা কমই আছে। সমগ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জটাই দেখা যায় অহলদাড়া থেকে।
শেলপু পাহাড়ের ৪২০০ ফুট উচ্চতার অহলদাড়া থেকে একদিকে ডুয়ার্স ও তরাইয়ের সমভূমি অঞ্চল,অন্যদিকে দার্জিলিং,কালিম্পঙ,সিকিমের বিভিন্ন পাহাড়,চা বাগান এবং তিস্তার গর্জ দৃশ্যমান। আর দিনভর কাঞ্চনজঙ্ঘা ভেসে থাকে দূরের আকাশে।
পাহাড়ের মাথায় রয়েছে গোটাতিনেক কটেজ। আর কিছু নেই। গোটা পাহাড়চূড়াটাই ওই তিন কটেজের পর্যটকদের।
অহলদাড়া থেকে এক কিলোমিটার নেমে এলে কমলালেবুর গ্রাম সিটং। শীতের সিটং কমলা রং ধরে।
অহলদাড়া থেকে খানিকটা নেমে এলে নামথিং পোখরি। পাইন বনে ঘেরা ছোট্ট একটি জলাশয়। তবে শীতে, গ্রীষ্মে জল থাকে না। বর্ষায় টইটম্বুর। তখন জায়গাটা ব্যাঙের মতো একধরণের বিপন্ন উভচর প্রাণী হিমালয়ান স্যালামান্ডারের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
শেলপু একেবারেই এক নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। লাটপাঞ্চার থেকে ৪ কিলোমিটার, অহলদাড়া থেকে ১ কিলোমিটার। পাখি, প্রজাপতি, ফুল, সুন্দর করে সাজানো ছোট ছোট বাড়ি, কমলালেবুর বাগান, দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা, পাহাড়ের জীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্র দিয়ে সাজানো শেলপু গ্রাম। লাটপাঞ্চার, অহলদাড়া ভ্রমণের সঙ্গে শেলপু গ্রামটিকেও যুক্ত করে নেওয়া যায়। বেড়িয়ে আসা যায় লাটপাঞ্চার বা অহলদাড়ায় থেকেই। আর একটা দিন শেলপুতে থাকতে পারলে আরও ভালো লাগবে।
লাটপাঞ্চার বা অহলদাড়া বা শেলপু থেকে দিনে দিনে বেড়িয়ে আসতে পারেন চটকপুর। লাটপাঞ্চার থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। একটু থেমে থেমে যেতে চাইলে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে। মাহালদিরাম, বাগোরার মতো অফবিট টুরিস্ট স্পট হয়ে চটকপুর পৌঁছাতে হবে। পথে পড়বে আরও নানা গ্রাম। পথের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দেবে। বাগোরা, মাহালদিরাম ও চটকপুরে থাকার জন্য হোমস্টে রয়েছে।
যাওয়ার পথ
এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে সেবক,কালিঝোরা হয়ে রাস্তা। কালিঝোরা শিলিগুড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার। কালিঝোরা থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে শাল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খানিকটা খাড়াই পথে ১৭ কিলোমিটার চলে এলে লাটপাঞ্চার। এখান থেকে অহলদাড়া ৩ কিলোমিটার। কালিঝোরা পর্যন্ত শেয়ার গাড়িতে এসে সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে অহলদাড়া আসা যেতে পারে। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি অহলদাড়া চলে আসা যায়।
দার্জিলিং থেকে বাগোরা, মারমিং হয়ে অহলদাড়া ৬৫ কিলোমিটার। কালিম্পং থেকে জাতীয় সড়ক ৩১এ ধরে কালিঝোরা হয়ে অহলদাড়া ৫৫ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
লাটপাঞ্চারেঃ হর্নবিল হোমস্টে, ফোনঃ ৯৪৭৫৯-৫৯৯৭৪, ৯০৬৪১-৩৪১৯৮। লাটপাঞ্চার হোমস্টে, ফোনঃ ৮৫১২৯-৮৮২৯৭, ৮৩৫০০-৬৭৭১৬। আশ্রয় হোমস্টে, ফোনঃ ৮১০১৫-৫৪৩১৮, ৯৬০৯৯-৩৯৪৩২।
অহলদাড়ায় রয়েছে হামরো হোমের তিনটি কটেজ। হোমস্টে ব্যবস্থায় থাকা-খাওয়া। পাহাড়ের মাথায় তিনটি ছিমছাম কটেজ। কটেজের মালিক পদম গুরুং। বুকিংয়ের জন্য সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন পদম গুরুংয়ের সঙ্গেই। যোগাযোগের নম্বর : ৮৯২৬০১৫৪৭৭,৮৯০৬২৩২২০২। যোগাযোগ করতে পারেন হামরো হোমের সঙ্গেও : ১৮০০-১২৩-৩৭৫৯।
শেলপু গ্রামেঃ মেঘদ্বার হোমস্টে, ফোনঃ ৯৭৩৩৪-৩২৪৭৭, ৭৬৭৯৬-৭৩৭৬১। কাসিস হোমস্টে, ফোনঃ ৮৫১৫৮-৮৮২৮৪।