গরুমারা অরণ্যের দক্ষিণাংশে মেদলার জঙ্গলের গা ঘেঁষে কালিপুর ইকো ভিলেজ। জঙ্গুলে পরিবেশে হালকা শীতের রোদ্দুর, আহা সে একেবারে মণিকাঞ্চনযোগ। রোমাঞ্চ, বৈচিত্র ও সৌন্দর্যের বিনুনি বাঁধা আছে কালিপুরে।
কাছেই মেদলা ওয়াচটাওয়ার। গণ্ডারের দেখা পাওয়া যায় মেদলা নজরমিনার থেকে। একশৃঙ্গ গণ্ডার। হাতির পিঠে চড়ে মেদলার ওয়াচটাওয়ারে যাওয়া যায়।
খানিকটা হেঁটে গেলে যাদবপুর চা-বাগান। চায়ের বাগান পেরিয়ে গেলে মূর্তি নদী। মোষের গাড়িতে করে গ্রাম বেড়াতে যাওয়া যায়। বুধারাম, চাটুকা, বিছাভাঙ্গা প্রভৃতি গ্রামের অনেক মানুষ গরুমারার জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল। কালীপুরও জঙ্গলে ঘেরা একটি গ্রাম কালিপুর ইকো ভিলেজ চত্বরে একটি শিমূল গাছকে গ্রামবাসীরা পুজো করে। গাছটিকে কেন্দ্র করে লৌকিক নাচ-গানের আসর বসে।
হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে গরুমারা অরণ্যাঞ্চল। জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার সাব-ডিভিশনের অন্তর্গত গরুমারা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯৪৯ সালে। জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পেয়েছে ১৯৯৪ সালে। ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গরুমারা অরণ্যের অন্দরে থাকার জন্য রয়েছে গরুমারা রাইনো ক্যাম্প, গরুমারা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প (ধূপঝোরা) ও চাপরামারি ওয়াইল্ডারনেস ক্যাম্প।
বন্যপ্রাণী দেখার জন্য অরণ্যের বিভিন্ন অংশে রয়েছে নজরমিনার। মেদলা, যাত্রাপ্রসাদ, চকচুকি ও চন্দ্রচূড় ওয়াচটাওয়ার। চুকচুকি ওয়াচটাওয়ার থেকে নানা পাখির দেখা মেলে। পরিষ্কার আবহাওয়ায় গরুমারা রাইনো ক্যাম্প চত্বর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।
রাতটা অনুভবের। কান পেতে শোনার। হঠাৎ কোনও জন্তু বা পাখির ডাক নাড়িয়ে দিতে পারে সত্ত্বাকে। জোছনায় বন বড় মায়াময়।
গণ্ডার গরুমারার অহঙ্কার। এ ছাড়াও হাতি, গাউর বা বাইসন, লেপার্ড ইত্যাদি-সহ প্রায় ৪৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০০ প্রকার পাখি, অন্তত বিশ প্রজাতির সাপ, নানা কীটপতঙ্গ রয়েছে গরুমারার জঙ্গলে। নদী-সহ বিভিন্ন জলাশয়ে পাওয়া যায় ২৭ প্রজাতির মাছ। ৭ প্রজাতির কচ্ছপের আবাস গরুমারা অরণ্য।
শাল শিমূল শিশু টিক বহেড়া ওদাল খয়েরের গভীর জঙ্গল। বিস্তৃত ঘাসবন। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে জলঢাকা, মূর্তি, গরাতি ও ইনডং নদী। ডুয়ার্সের অরণ্য, তার জীববৈচিত্রকে প্রাণবন্ত রেখেছে এইসব নদী।
গরুমারা অরণ্যে জিপ সাফারির ব্যবস্থা আছে। তবে হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল বেড়ানোর রোমাঞ্চই আলাদা। হাতি ঝোপঝাড় ভেঙে জঙ্গলের এমন সব এলাকায় চলে যায় যেখানে জিপ যেতে পারে না। কালিপুর থেকে এলিফ্যান্ট সাফারির ব্যবস্থা আছে। গরুমারা রাইনো ক্যাম্প এবং গরুমারা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প (ধূপঝোরা) থেকেও হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল সাফারি করা যায়।
যাওয়ার পথ
ট্রেনে নিউ মাল জংশন স্টেশনে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে গরুমারা চলে আসুন চালসা হয়ে। দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গরুমারা ৯৫ কিলোমিটার।
থাকার ব্যবস্থা
কালিপুর ইকো ভিলেজ একটি অরণ্য-আবাস। পরিচালনা করে রাজ্যের বনবিভাগ। থাকার জন্য রয়েছে ৪টি কটেজ। ডিলাক্স ঘরের ভাড়া ২০০০ টাকা (ব্রেকফাস্ট সহ)।
ঘর বুক করতে পারেন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ www.wbfdc.net ফোনঃ ৭৬০৪০৪৪৪৭৯ (বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে)। গরুমারার অন্য কোনও অরণ্য-আবাসও বুক করা যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই।
কাছাকাছি
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের প্রায় গা ঘেঁষে ছোট্ট, সুন্দর শহর চালসা। চালসায় একটা দিন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শেষ গ্রাম বিন্দু। ভারত-ভুটান সীমান্তে বিন্দুর অবস্থান।
চালসায় থাকার ব্যবস্থাঃ হোটেল সেন্টার পয়েন্ট, ফোন ৯৪৩৪৪-৬১৬০৩। রিলায়েবল হোমস্টে, ফোন ৯৬১৪৮-১০১৯৪। জে এম ডি রিসর্ট, ফোন ৯৮৩০০-৯৩০০৭। সিনক্লেয়ার্স রিট্রিট, ৩৫৬২২-৬০২৮২।