Follow us

নৌকায় চড়ে ডলফিন দেখতে চলুন নয়াচর

নৌকায় চড়ে ডলফিন দেখতে চলুন নয়াচর

নদিয়া আর পূর্ব বর্ধমানের সীমান্ত অঞ্চল। পাশেই বইছে গঙ্গা। নদীতে জেগেছে দ্বীপের মতো বিশাল এক চর। নয়াচর। হাওড়া-কাটোয়া রেলপথে দাঁইহাট স্টেশন থেকে এই নয়াচর ৫ কিলোমিটার।

নয়াচরের কথা বলতে গেলে এক বাঙালি যুবকের কথা উঠবেই। নাম গণেশ চৌধুরী। বর্ধমানের সীমানা ঘেঁষা নদীয়ার বাসিন্দা। বন্যপ্রাণ, গাছপালার প্রতি প্রবল আকর্ষণ শৈশব থেকেই। বড় হয়ে ফটোগ্রাফির পাঠ নিয়েছেন মন দিয়ে। গণেশবাবু জানাচ্ছেন, “১৮ বছর ধরে কাজ করে চলেছি এই নয়াচরে। গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা চরায় প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া নানা উদ্ভিদ, পাখি,কীট-পতঙ্গ, ভোঁদর, এদের দেখতে দেখতে আমার শৈশব থেকে যৌবনে আগমন। সেইসব পশুপাখি কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, কীভাবে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটানো যায় তাই নিয়ে একটা লড়াইয়ে নেমেছি। লড়াইটা চলছে।”

সাপের ছবি তোলায় মগ্ন গনেশ চৌধুরী

নয়াচরের কাছেই গঙ্গায় মিলেছে অজয় নদ। ওই সঙ্গমের কোথায়, কখন গাঙ্গেয় ডলফিনের ডিগবাজি দেখা যেতে পারে তা গণেশবাবুর নখদর্পণে। গণেশ চৌধুরীর তোলা ‘দি লাস্ট স্ট্যান্ড’ নামের জল থেকে একটি ডলফিনের আকাশমুখী উড়ানের ছবিটি বিস্মিত করে। ২০২০-তে ছবিটি ‘আ্যানিম্যাল পোট্রেটস ক্যাটেগরি’-তে ‘নেচার ইনফোকাস ফটোগ্রাফি’ পুরষ্কার জিতে নিয়েছে। কাঁধ সমান জলে দাঁড়িয়ে ভারী ক্যামেরা হাতে চার ঘন্টা অপেক্ষার পরে ছবিটি তুলতে পারা গিয়েছিল বলে গণেশবাবু জানালেন। বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিন বাঁচানোর জন্য গণেশবাবুর তাগিদটাও অমনই ধৈর্যশীল।

গঙ্গা আর অজয় নদের সঙ্গমে গণেশ চৌধুরীর তোলা সেই পুরষ্কৃত ছবিটি।

কাজের পরিসর বেড়েছে। কাজ বেড়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়েছেন গণেশবাবুরা। নাম’ওয়াইল্ড রিঅ্যাকশন’। সঙ্গে রয়েছেন আরেক প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অর্চন মিত্র ও গণশবাবুর ভাই রাজেন্দ্র চৌধুরী। সংগঠনের মূল লক্ষ্য বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণ নিয়ে গবেষণা। নয়াচরে ওয়াইল্ড রিঅ্যাকশন-এর একটি হোমস্টে আছে। আনাবিল প্রকৃতির মধ্যে ছোট্ট, সুন্দর হোমস্টে। নদী, নদীচর, পাখি, নদীতে নৌকা বেয়ে ডলফিন দেখতে যাওয়ার অভিযান, খাওয়ার পাতে হোমস্টের বাগানে ফলানো নানা সবজি ও গঙ্গার তাজা মাছের নানা পদের উপস্থিতি, আহা, সবমিলিয়ে সে এক আবিষ্কার, সে এক প্রাণের উৎসব।

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের তাগিদে ওয়াইল্ড রিঅ্যাকশনের সৃষ্টি।

হোমস্টের দুটি ঘর। একই দলের সদস্য হলে দুটো ঘরে ৮-১০ জন রাত্রিবাস করতে পারেন। আলাদা আলাদা পরিবার হলে ৬ জন থাকতে পারবেন এই হোমস্টেতে। খরচ কেমন? সকাল থেকে সন্ধ্যা মাথাপিছু ১৪৫০ টাকা। এই খরচের অন্তর্ভুক্ত সারাদিনের খাওয়াদাওয়া, পাখি চেনা, নৌকায় চড়ে গঙ্গা-অজয়ের সঙ্গমে ডলফিন দেখতে যাওয়া। রাতে থাকলে মাথাপিছু খরচ হবে ২০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে রাতের নয়াচরে বেড়ানো যাবে, থাকবে নাইট রিভার সাফারি বা রাতের নদী ভ্রমণ। জোছনারাতে সে ভ্রমণ স্বপ্নসম। খাওয়াদাওয়া তো থাকছেই। চাইলে এই শীতের মরশুমে বনফায়ারের আয়োজন হতে পারে।

 

হোমস্টে।

 

অর্চন মিত্র জানাচ্ছেন, “প্রকৃতির সান্নিধ্য যাঁরা ভালোবাসেন, সেই সান্নিধ্যের আনন্দ যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁরা নয়াচরে এসে আনন্দ পাবেন, শান্তিও পাবেন।”

গণেশবাবু বলছেন, “পিকনিক সম্পর্কে আমাদের যে সাধারণ ধারণা, উচ্চস্বরে বক্স বাজানো, প্রবল হৈ চৈ, সে-সব এখানে বেমানান। নয়াচরের প্রকৃতি, বহমান গঙ্গা, পাখি, নৌকাভ্রমণ উপভোগ করুন, নিজের হাতে বাগান থেকে সবজি তুলুন। পরিবেশের সঙ্গে মানানসই খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গঙ্গা থেকে সদ্য ধরা মাছ খাওয়ার পাতের বিশেষ আকর্ষণ।
বাচ্চারা পাখি, প্রজাপতি চিনবে, পাখির বাসা তৈরি করা শিখবে, ডলফিন দেখে উল্লসিত হবে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দলবেঁধে নয়াচরে শিক্ষামূলক ভ্রমণে এলে তাদের জন্য খরচে কিছুটা ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে গণেশবাবু জানালেন।

শীতের রাতে বন ফায়ার।

 

প্রকৃতির মধ্যে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন।

যাওয়ার পথ

ট্রেনে এলে হাওড়া থেকে কাটোয়ার পথে দাঁইহাটা স্টেশনে নামবেন। ওখান থেকে টোটো পাবেন নয়াচরে পৌঁছানোর জন্য। দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। সড়কপথে কলকাতা থেকে নয়াচর ১৫৪ কিলোমিটার। সড়কপথে এলে বর্ধমান থেকে কাটোয়া এসে পানুঘাটের রাস্তা ধরতে হবে, পানুঘাট, চরপাতাইয়াহাট হয়ে নয়াচরে আসবেন। চরপাতাইয়াহাট থেকে নয়াচরের হোমস্টে ৫ কিলোমিটার।

হোমস্টের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৭৩৪৮৪৫৪৭৭।

ছবি: ওয়াইল্ড রিঅ্যাকশন-এর সৌজন্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *